‘উপস্থাপনার কথা জানতে চান? উমম…করব, যে আয়োজন একেবারে ভিন্ন ধরনের মনে হবে।’ মডেলিং? ‘এটা নিয়মিতই চলছে। কারণ মডেল হিসেবে কাজ করাও আমার কাছে অভিনয়ের মতোই একটা আনন্দের।’ গান গাওয়া কি একই রকম আনন্দের? ‘হুম.. কী বলব? হা-হা-হা, ভালো লাগে, নইলে তো গাইতাম না।’
তাহলে নুসরাত ফারিয়ার কোন পরিচয় তুলে ধরলে বেশি ভালো লাগবে- উপস্থাপক, কণ্ঠশিল্পী, মডেল নাকি অভিনেত্রী? ‘অবশ্যই অভিনেত্রী। অভিনয় আমি ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ ভালোবাসি। তাই যা কিছুই করি না কেন, অভিনয় বাদ দিয়ে নয়। বরং অভিনয়ের বাইরে যদি হাতে সময় থাকে তাহলে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে বসি।’
নুসরাত ফারিয়ার এ কথায় বোঝা গেল, অভিনয় এখন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। খেয়াল করলে এটাও দেখি, উপস্থাপনা ও মডেলিং তাঁকে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দিলেও অভিনয়কেই এখন প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। একের পর এক ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি জয় করে চলেছেন দর্শক-হৃদয়। এখন কথা হলো, যে অভিনয়ের তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছে, সেই অভিনয় জগতে তিনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান? সেটা জানতে চাইলে ফারিয়া বলেন, ‘একজন পরিণত শিল্পী হয়ে উঠতে যা কিছু করা দরকার তা করব, যাতে করে দর্শক অভিনয়শিল্পী হিসেবেই আমাকে মনে রাখেন। শীর্ষ অভিনেত্রী, জনপ্রিয় তারকা- এই শব্দগুলো নিয়ে একদমই ভাবি না। প্রতিযোগিতাও কারও সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গে করে যেতে চাই। এই প্রতিযোগিতা, এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্র দর্শকের কাছে আরও বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার।’
শুধু নুসরাত ফারিয়া নন, অনেকের মুখেই আমরা শুনেছি, প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙে নতুনরূপে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাঁরা। এও বলেছেন, জনপ্রিয়তার জোয়ারে গা ভাসাতে চান না, তারকাখ্যাতির মোহও তাঁদের নেই। কিন্তু তাঁদের অনেকের কথার সঙ্গে কাজের মিল খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিক থেকে ফারিয়া একটু ব্যতিক্রম এ কারণে যে, তিনি দর্শক-চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে গল্প, চরিত্র নির্বাচন করেন। আবার এটাও যাচাই করে নেন, তা কতটা সময়োপযোগী।
তাঁর কথায়, ‘যে কোনো কাজের প্রথম শর্ত থাকে গল্প ভিন্ন ধরনের কিংবা সময়োপযোগী হতে হবে। ইতিহাসনির্ভর কাজ করতেও আপত্তি নেই। তার আগে নির্মাণ পরিকল্পনা ও চরিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে চাই। গল্পে চরিত্র কতটা গুরুত্ব পেয়েছে, সেটাও দেখার চেষ্টা করি। চরিত্রের ব্যাপ্তি কম হতে পারে, কিন্তু তা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে দ্বিতীয়বার ভাবব না।’ তাঁর এই কথার প্রমাণ মেলে এখনকার ছবির তালিকা দেখে। যেখানে তিনি চেষ্টা করেছেন রোমান্টিক নায়িকার খোলস থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করে দেখানোর।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে শ্যাম বেনেগাল নির্মিত ‘মুজিব’ ছবিতে ফারিয়াকে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তরুণ বয়সের চরিত্রে। একইভাবে দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিতেও নিজেকে ভিন্নরূপে তুলে ধরেছেন ফারিয়া। এ দুটি ছবি নিয়ে ফারিয়া বলেন, ‘মুজিব’ এমন একটি ছবি, যার সূত্র ধরে ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি। শেখ হাসিনার তরুণ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয়েছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, এই ছবির সূত্র ধরে গুণী নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের কাছে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। আর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নিয়ে শুধু এটুকুই বলব, যে ধরনের চরিত্রের জন্য প্রতীক্ষায় থাকি, তেমনই একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছে এ ছবির মাধ্যমে। তাই এ ছবি দুটি মুক্তির জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনে যাচ্ছি।
শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ফারিয়ার ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি। এরই মধ্যে ছবির ট্রেলারও প্রকাশ পেয়েছে। তারপর থেকে এ ছবি নিয়ে দর্শক-কৌতূহল বেড়েই চলেছে। তাই ফারিয়ার প্রতীক্ষার প্রহর যে দীর্ঘ হবে না- তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে আবার কলকাতায় একে একে তিনটি ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফারিয়া। আয়ুশমান প্রত্যুশ পরিচালিত ‘রকস্টার’ ছবিতে তাঁর বিপরীতে থাকছেন কলকাতার আলোচিত অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত। রাজা চন্দের ‘ভয়’ ছবিতে তিনি আরও একবার অভিনয় করেছেন অঙ্কুশের বিপরীতে। পাশাপাশি সায়ন্তন ঘোষালের ‘বিবাহ অভিযান-২’ ছবির শুটিঙের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ছবির প্রথম কিস্তি ‘বিবাহ অভিযান’-এ অভিনয় করেও কলকাতা ও এ-দেশের দর্শকের কাছে দারুণ সাড়া পেয়েছিলেন। এর বাইরেও ইয়াশ রোহানের সঙ্গে ওয়েব ছবি ‘পর্দার আড়ালে’ এবং অপূর্বর বিপরীতে ‘আইকনম্যান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। যেটি অনেকের কাছে খানিকটা ভিন্ন ধাঁচের মনে হয়েছে। দর্শকও ‘আশিকী’ থেকে শুরু করে ‘হিরো ৪২০’, ‘বাদশা-দ্য ডন’, ‘ধ্যাততেরিকি’, এবং ‘প্রেমী ও প্রেমী’ ছবিগুলোয় যে ফারিয়াকে দেখেছেন, সেই ফারিয়াই এবার পর্দায় ধরা দিয়েছেন নতুন রূপে।
এই অভিনেত্রীর কাছে তাই প্রশ্ন ছিল, পরিণত অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার জন্যই কী রোমান্টিক নায়িকার অবয়ব থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন? এ উত্তরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘একদমই না। রোমান্টিক গল্প এখনও ভালো লাগে। তাই যেকোনো সময় রোমান্টিক গল্পের চরিত্রে অভিনয় করতে প্রস্তুত। তবে গৎবাঁধা প্রেমের গল্পে নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছা একেবারেই নেই। আসলে গল্প রোমান্টিক, সামাজিক, অ্যাকশনধর্মী, ইতিহাসনির্ভর- যেমনই হোক, সেখানে নতুনত্ব আছে কিনা, চরিত্র দর্শকের মনে ছাপ ফেলতে পারে কিনা- সেটা যাচাই করে কাজ করছি। কাজের মধ্য দিয়ে শেখার চেষ্টা করছি, কীভাবে একেকটি চরিত্রে মিশে গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি সেই মানুষের রূপান্তর করা যায়। অন্তত পর্দায় যতক্ষণ থাকব ততক্ষণ যেন দর্শকের মনে হয়, সে নুসরাত ফারিয়া নয়, বরং অভিনীত চরিত্রে মানুষ। এমন মিশন নিয়েই অভিনয়ের ভুবনে এক এক করে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’