তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ প্রশমন আর দলকে আরও গতিশীল করতে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলকে গোছানোর বাইরে লক্ষ্য থাকবে তাদের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণ করা।
প্রত্যাশিত পদ-পদবি না পাওয়া নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীদের ভেতরে রাগ-ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। দল ক্ষমতায় থাকলেও নিজেদের সুবিধাবঞ্চিত বলে মনে করে একটি অংশ। এ কারণে এদের মধ্যে রয়েছে না পাওয়ার বেদনা, আছে ক্ষোভ। আবার অনেক জায়গায় বছরের পর বছর কোনও সম্মেলন হচ্ছে না। নানা অজুহাতে সম্মেলন না করে অনেকে পদ ধরে রেখেছেন। এ নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে অসন্তোষ, হচ্ছে দলাদলি। সব মিলিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভীষণ অস্থিরতা ও স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন।
তাই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে গোছানোর জন্য সেপ্টেম্বর মাসে মাঠে নামবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই সফরে থাকবে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়টিও।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, তাদের প্রথম কাজ হবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যার গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করা। তারপর সমস্যা চিহ্নিত করে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত একই সুর ও তালে সংগঠন পরিচালনা করা। অর্থাৎ একটা টিমওয়ার্ক গড়ে তোলা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় সংগঠনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নেতা-নেতা পর্যায়ে আছে কিছু ভুল বোঝাবুঝিও। তাছাড়া ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় বছরের পর বছর সম্মেলন হয় না। এসব জটিলতা দূর করা হবে বছরের বাকি মাসগুলোতে।
তিনি আরো বলেন,করোনার কারণেও সংগঠনে স্থবিরতা এসেছে। মূলত কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত টিমওয়ার্ক করা হবে।
এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। করোনা পরিস্থিতি এবং নির্বাচন কমিশনের ইউপি নির্বাচনের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে। আমাদের মূল টার্গেট তৃণমূল গুছিয়ে তোলা।
কীভাবে গোছাবেন জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করবো আমরা। সমস্যা চিহ্নিত করে গ্রহণযোগ্য সমাধান করার মাধ্যমে টিমওয়ার্ক গড়ে তোলাই হলো এ বছরের রাজনৈতিক কর্মসূচি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘তৃণমূল রাজনীতিতে কিছু বিভাজন সৃষ্টি হয়ে আছে। পদ পাওয়া না পাওয়া,সুবিধাবঞ্চিত থাকা ও নিয়মিত সম্মেলন না করে পদ ধরে রাখার অভিযোগে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।’
ফারুক খান আরো বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে তৃণমূল রাজনীতি গুছিয়ে তুলতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে সারাদেশ সফরে নামবে কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ৮ বিভাগের জন্য ৮টি টিম করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নেতারা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসবেন, তাদের অভিযোগ শুনবেন। মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানও করবেন।’
ফারুক খানের মতে, তৃণমূলে কিছু বিরোধ-বিভাজন সৃষ্টি হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতাও দেখা দিয়েছে। সফরের মধ্য দিয়ে এসব দূর করা যাবে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন