সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠা রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির হাত বদল হয়েছে। চাঁদাবাজ কমিটির নেতা হয়েছে থানা পুলিশের সোর্স ও দালাল ফারুক হোসেন। স্ট্যান্ডটিকে বানিয়েছে মাদক ও জুয়ার আড্ডাখানা। এ স্ট্যান্ডের গাড়ি দিয়ে মাদক পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এ স্ট্যান্ডের একাধিক গাড়ি মাদকসহ আটক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শিমরাইল মোড়ে কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ অভিযান হলেও রহস্য জনক কারণে রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড থেকে যায় বহাল তবিয়তে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধিন কমিটি বহাল থাকার পরও চিটাগাংরোড রেন্ট এ কার মালিক সমিতির ১৫ সদস্যের নতুন পাল্টা কমিটি করা হয়েছে। মো: জসিম উদ্দিন সভাপতি মো: ফারুক হোসেন সাধারণ সম্পাদক ও মো: খোরশেদ আলম সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে গঠিত এই নতুন কমিটি নিয়ন্ত্রন করছে স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি। তবে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের দালাল ও সোর্স হিসেবে পরিচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন।
গাড়ি মালিক সূত্রে জানা গেছে, শিমরাইল মোড় রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে আড়াই শতাধিক গাড়ি রয়েছে। প্রত্যেক গাড়ির জন্য মাসিক চাঁদা দিতে হয়। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা আর হাইয়েজ গাড়িপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা নিচ্ছেন কমিটির নেতারা। পরিসংখ্যান মতে আড়াইশতাধিক গাড়ি থেকে মাসে তিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কমিটির অনুমোদন দেওয়া থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ দুই নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের বড় কর্তারা পাচ্ছেন চাঁদাবাজির ভাগ। প্রশাসন ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের দালাল ফারুক হোসেন।
অভিযোগ রয়েছে, রেন্ট-এ কারের কিছু গাড়ি চলছে অনিয়মিত নামসর্বস্ব দৈনিক পত্রিকা ও অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়ে। বিভিন্ন অপরাধীরা মিডিয়া স্টিকার লাগানো এসব গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালকদের ম্যানেজ করে ছিনতাই ও মাদক পাচার করছে । দেশের বিভিন্ন জেলায় এই স্ট্যান্ডের (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৩১৯৫), ( ঢাকা মেট্রো-গ-৩২-৩৬০০), (ঢাকা মেট্রো-চ-১৬-০১০১), (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-২৯২১), (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৩-৮৫৭৩), (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-১২১০ নম্বর) গাড়ি ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ র্যাব, থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। মাদক পাচারে জড়িত রয়েছে মালিক সমিতির নেতারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাড়ি চালক জানায়, কমিটির নেতারাই মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে নোতারা তাদের কাছে গাড়ি ভাড়া দিয়ে অর্থের লোভে ফেলে চালকদেরকে মাদক বহন করতে বাধ্য করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি জায়গা দখল করে সংশ্লিষ্ট মহলকে ম্যানেজ করে এই স্ট্যান্ড গড়ে উঠে। প্রতিটি গাড়ি থেকে একেক মাসে একেক সংকেত টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় হচ্ছে। সর্বক্ষন স্ট্যান্ডে জুয়া খেলা হয়। দেখে মনে হয় তারা তাস বা লুডু খেলছে। প্রকৃতপক্ষে এসব খেলা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা বাজিতে। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন নিয়ে একাধিকবার দুই গ্রæপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তার পরও স্থানীয় প্রশাসন কেন অবৈধ স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক চাঁদাবাজির নেতৃত্বে থাকা মো: ফারুক হোসেন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা আর হাইয়েজ গাড়িপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে স্ট্যান্ডে মাদক ও জুয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, নতুন একটি কমিটি হয়েছে জানি। চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি চাঁদাবাজি মাদক জুয়ার সত্যতা পাই তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।