নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠা রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এখন ফারুকের হাতে। সরকারী জমিতে জোরপূর্বক অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন তিনি।
ফারুক নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানের ভাই পরিচয় দিয়ে থাকেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদার টাকা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, রাজনৈতিক শীর্ষ নেতার পকেটেও যায় নিয়মিত।
সম্প্রতি রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির নামে (চাঁদাবাজ কমিটি) একটি কমিটি গঠন করে তারা এই চাঁদাবাজি করছেন বলে জানা গেছে। শিমরাইল মোড় এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে গাড়ির চালকরা ফারুককে চাঁদাবাজ ও থানা পুলিশের সোর্স হিসেবেই চিনেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৪নং ওয়র্ডে বসবাস করেন ফারুক। ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার সখ্যতা বেশি। পুলিশ ওই এলাকার কাউকে ধরে আনলে সবার আগে থানায় ছুটে আসেন এই ফারুক। থানার কর্মকর্তাদের কাছে মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে শুরু করেন দেন-দরবার।
বর্তমানে ফারুক রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডটিকে বানিয়েছেন মাদক ও জুয়ার আড্ডাখানা। সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় তাস, লুডু ও আইপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলা। লেনদেন হয় মোটা অংকের টাকা। সেখানে টহলরত পুলিশ গেলেও ফারুক তাদেরকে ম্যানেজ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের গাড়ি দিয়ে মাদক পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এ স্ট্যান্ডের একাধিক গাড়ি মাদকসহ আটক হয়েছে।
জানা গেছে, এই রেন্ট-এ কারের কিছু গাড়ি চলছে অনিয়মিত নাম সর্বস্ব দৈনিক পত্রিকা ও অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়ে। যার শেল্টার দিয়ে থাকেন চাঁদাবাজ ফারুক। বিভিন্ন অপরাধীরা মিডিয়া স্টিকার লাগানো এসব গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালকদের ম্যানেজ করে ছিনতাই ও মাদক পাচার করছে।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই স্ট্যান্ডের (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৩১৯৫), (ঢাকা মেট্রো-গ-৩২-৩৬০০), (ঢাকা মেট্রো-চ-১৬-০১০১), (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-২৯২১), (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৩-৮৫৭৩), (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-১২১০ নম্বর) গাড়ি ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ র্যাব, থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। মাদক পাচারে জড়িত রয়েছে চাঁদাবাজ ফারুকের মালিক সমিতির নেতারাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়ি চালক জানান, তারা নতুন করে যে কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটির কোন বৈধতা নেই। আমরা তাদের এই কমিটি মানি না। তারা জোর করে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। গাড়ি চালকরা আরও বলেন, কমিটির নেতাদের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে।
তারা যে কমিটি তৈরি করেছে তাদের মধ্যেও মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে নেতারা তাদের কাছে গাড়ি ভাড়া দিয়ে অর্থের লোভে ফেলে চালকদেরকে মাদক বহন করতে বাধ্য করছে।
সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভুঁইয়া রাজু ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি বর্তমানে বহাল থাকার পরও নতুন করে চিটাগাংরোড রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির ১৫ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত কমিটি গঠনের নাম করে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
সেই প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নব্য আওয়ামীলীগার সিব্বিরের ভাই মো: জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে চাঁদাবাজ ফারুক হোসেনকে। তবে বর্তমানে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির ভাই পরিচয়দানকারী ফারুক ওরফে চাঁদাবাজ ফারুক।
অভিযোগ রয়েছে, রাজু ও সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি বেশ কয়েক বছর ধরে রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। মূলত চাঁদাবাজির জন্যই নতুন করে পাল্টা কমিটি হয়েছে । গাড়ির মালিকরা জানান, নতুন কমিটি কি আর পুরান কমিটি, সবারই টার্গেট চাঁদাবাজি। চাহিদা মত চাঁদা না দিলেই স্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকানো যায় না।
এদিকে বর্তমান কমিটি ও প্রস্তাবিত কমিটিকে ঘিরে শিমরাইল মোড় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংঙ্কা করছেন গাড়ির চালক ও হেলপাররা। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিকবার দুই গ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তার পরও স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শিমরাইল মোড়ে সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে আড়াই শতাধিক ছোট-বড় গাড়ি রয়েছে। ছোট-বড় প্রত্যেক গাড়ির জন্য মাসিক হারে চাঁদা দিতে হয়। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং হাইএস গাড়ি প্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা নিচ্ছেন প্রস্তাবিত কমিটির নেতারা।
পরিসংখ্যান মতে আড়াই শতাধিক গাড়ি থেকে মাসে ২ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনকে ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়েছেন চাঁদাবাজ ফারুক
এ বিষয়ে চাঁদাবাজির নেতৃত্বে থাকা প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক জানান, জোর করে কোন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না। নতুন করে আমরা একটা সমিতি গঠন করেছি। সেখানে চালক ও বিভিন্ন খরচ বাবদ টাকা উঠানো হয়। তবে জুয়া খেলার বিষয় অস্বীকার করে ফারুক বলেন, প্রাইভেটকার থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও মাইক্রোবাস থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, নতুন একটি প্রস্তাবিত কমিটি হয়েছে শুনেছি। পুলিশের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এখন শুনেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, শিমরাইল মোড়ে কিছুদিন পর পর নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারণে রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ড থেকে যায় বহাল তবিয়তে।
সুত্র: নারায়ণগঞ্জ টাইমস