সিদ্ধিরগঞ্জে দুইটি বিচারাধিন হত্যা মামলার আসামি একজোট হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রনের মিশনে নেমেছে। তাদের মিশন সফল করতে সাথে নিয়েছে আরো কয়েকজন চিহ্নিত চাঁদাবাজকে। চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি সুদের মহাজন হিসেবে পরিচিত আতিকুর রহমান ওরফে টেম্পু আতিক।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ উত্তর আজিবপুর বাগানবাড়ী এলাকার নূরু মুন্সির ছেলে আতিকুর রহমান। নব্বই দশকে আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কে টেম্পু থেকে ৫ টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে তার অপকর্ম শুরু হয়। চাঁদাবাজির পাশাপাশি বাগানবাড়ি এলাকায় চালায় মাদক ব্যবসা। ফলে অল্পদিনেই বনে যায় বহু টাকার মালিক। শুরু করে সুদ ও দেহ ব্যবসা। অবৈধ টাকার গরমে বিয়ে করেন ৬ টি। বর্তমানে আছে ৫ টি। তবে প্রত্যেকে থাকে আলাদা বাড়ীতে। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিকবার জেলা গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় আতিক।
সোর্স মালেক ও মাদক বহনকারী গাড়ি চালক জুয়েল হত্যা মামলার আসামি আতিক ও আউলাবন এলাকার তৈফল মিয়ার ছেলে কবির হোসেন নতুন করে জোট বেধেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত লেগুনা চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন নিয়ে এক জোট হয়েছে হত্যা মামলার দুই আসামি। শক্তি বৃদ্ধির জন্য সাথে নিয়েছে, শিমরাইল মোড় রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির সভাপতি চিহ্নিত চাঁদাবাজ সর্দাপাড়ার সালাউদ্দিন, আজিবপুর কসাইপাড়ার কাইয়ুম ওরফে কসাই কাইয়ুম ও ধনোহাজী রোড এলাকার হাসানুজ্জামান পরশসহ ১৫/২০ জনকে। চক্রটি সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপকর্ম করে আসছে দীর্ষ দিন ধরে।
গত সপ্তাহে জুয়ার আসর থেকে কবির হোসেনকে গ্রেফতার করেছিল থানা পুলিশ। অভিযোগ জানা গেছে, সুদের মহাজন আতিক অধিক লাভের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে প্রলুব্ধ করে সুদে টাকা দিয়ে লেগুনাসহ বিভিন্ন গাড়ি কিনায়। কিন্তু সুদের গ্লানি টানতে টানতে লাভের মুখ দেখেনি গাড়ির মালিক। মাস ছয়েক পর বিরক্ত হয়ে গাড়ি বিক্রি করতে চাইলে আতিক অর্ধেক দামে কিনে নেয়। গাড়ি বিক্রি করলেও টানতে হয় সুদের গ্লানি। এভাবে আতিক ১৫ টি লেগুনা গাড়ির মালিক হয়েছে। একাধিক মামলা থাকায় আতিক তার স্ত্রীদের ঢাকা, যাত্রাবাড়ী ও সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আলাদা বাড়ীতে রাখেন। তিনি কখন কোন স্ত্রীর সাথে থাকেন কাউকে জানায়নি। তবে বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বলে জানা গেছে। তবে সুদের কিস্তি নিতে এক দুইদিন পর পর সন্ধ্যায় বাগানবাড়ীর অফিসে আসেন। আর চাঁদার টাকার ভাগ ও গাড়ির জমা নিতে শিমরাইল মোড় রাত ৮ টার পর তার দেখা মিলে বলে স্থানীয়রা জানায়।
লেগুনা মালিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দেড় শতাধিক লেগুনা চলাচল করছে। এসব গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করতে যাতাবাড়ী ও সিদ্ধিরগঞ্জের একটি চক্র একজোট হয়েছে। যাত্রাবাড়ী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পলাশ নামে এক সন্ত্রাসী আর সিদ্ধিরগঞ্জে আতিক ও পরশ। আগে জিপি চাঁদা ছিল ৪৫০ টাকা। লাইনম্যান শিমরাইল মোড়ে ৩০ টাকা, সাইনবোর্ড ২০ টাকা, যাত্রাবাড়ীতে ৫০ টাকা। গত কয়েকমাস ধরে জিপি চাঁদা করা হয়েছে ৫৫০ টাকা।
এচক্রটির চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে সকল গাড়ি মালিকরা মিলে ২১ সদস্যের লেগুনা মালিক সমিতির কমিটি করা হয়ে। কমিটি করায় চাঁদাবাজরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ফলে তারা সমিতির লোকজনকে দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছেন না। চাঁদা দিতে অপত্তিকরায় সমিতির লোকজনকে সড়কে ফেলেই মারধর করা হচ্ছে।
লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন নাজু বলেন, আমি একজন গাড়ি মালিক হিসেবে এমন জুলুম অত্যাচার মেনে নিতে পারছিনা। তাই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মালিক সমিতি করা হয়েছে। কমিটির কাগজ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছি। কিন্তু চাঁদাবাজরা আমাদের কাজ করতে দিচ্ছে না।
এবিষয়ে আতিকুর রহমান বলেন, আমি সবচেয়ে বেশি লেগুনা গাড়ির মালিক। আমার সাথে আলোচনা না করে কেহ লেগুনার নেতৃত্ব দিলে মেনে নিবনা। নাজুর কমিটিকে অধিকাংশ মালিকরা মেনে নিচ্ছেনা। আমি কোন ঝামেলা করছিনা। নাজু ও তার লোকজনই গায়ে পড়ে জগড়া সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।