নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের “পাইনাদি প্রিকেডেট এন্ড হাই স্কুল” নামে একটি স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ৯জন শিক্ষার্থীর আগামী ১৯ জুনের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেনা। সোমবার (১৩ জুন) তারা স্কুল থেকে পরীক্ষার প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করতে এসে বিষয়টি জানতে পারে। এ নিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি তেরা মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী ৯ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় তারা স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খলিলুর রহমান অপকর্মের বিচার চেয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাজমিন, সুখী, জান্নাত, মেহেরুন, মীম, কবিতা, তন্নি, আফসানা, সোনালীসহ অভিভাবক বৃন্দ।
অপরদিকে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী আনোয়ার ইসলাম পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না পারা শির্ক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে এক বছরের ক্ষতি পূরনের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে দাবি করেন ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খলিলুর রহমান। তবে কাউন্সিলর হাজী আনোয়ার ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না। এ নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, স্কুলটি হাই স্কুল নামে পরিচিত হলেও তার নিবন্ধন নেই। অনুমোদহীন এই স্কুলের নাম ব্যবহার করে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয় অন্য স্কুলের নামে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেরুন তার বক্তব্যে বলেন, অত্র স্কুলে আমরা বিগত ১০ বছর যাবৎ লেখাপড়া করছি। আমরা ২০১৯ সালের অষ্টম শ্রেনীর ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হই। তিনমাস ক্লাস করার পর দেশে করোনা মহামারী শুরু হলে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
টাকা দিয়ে মিমাংসার দায়িত্ব নিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর !পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর আমরা স্কুলে গিয়ে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদেরকে প্রাইভেট পরতে বলেন। তারপর থেকে ৮০০ টাকা বেতনে আমরা ওই স্কুলের তত্ত্বাবধানে প্রাইভেট পরতে থাকি। আমাদের ব্যাচে ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল কিন্তু করোনার কারণে অনেকে চলে যায়।
শেষ পর্যন্ত আমরা ১১জন ছাত্র-ছাত্রী থেকে যাই। দুই জন ছাত্র এবং আমরা ৯ জন ছাত্রী। এছাড়া সময় মত আমাদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন ফিও নেয়া হয়। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের লক্ষ্যে আমাদের মডেল টেষ্ট পরীক্ষা বাবদ ফি এবং পরীক্ষাও নেয়।
পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি কিন্তু পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের রেজিষ্ট্রেশন এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি জানতে পেরে আমরা মর্মাহত। এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র ত্রুটি নেই। বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামকে বিষয়টি অবগত করলেও আমরা কোন সুরাহা পাইনি। আমরা অর্থলোভী প্রতারক খলিলুর রহমানের প্রতারনার শিকার। আমরা জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাকিয়া বেগম জানায়, আমরা বিশ্বাস করে আমাদের সন্তানকে এই স্কুলে লেখা পড়া করার জন্য দিয়েছি। আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা এর বিচার চাই। আমাদের সন্তানদের এ বছরের পরীক্ষায় অংশগ্রহনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানই।
এ বিষয়ে “পাইনাদী প্রিকেডেট এন্ড হাই স্কুলের” প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, করোনার কারনে আমার স্কুলের অফিস সহকারী নয়ন দীর্ঘ সাত-আট মাস থেকে অনুপস্থিত ছিলো।
এই শিক্ষার্থীদের মিজমিজি পশ্চিম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কথা ছিলো। কিন্তু নয়ন উপস্থিত না থাকায় এমন একটি দূর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী আনোয়ার ইসলাম আমাকে এই ৯ শিক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ বাবত ২৫ হাজার টাকা করে দিতে বলেছেন। আমি তাদের টাকা পরিশোধ করে দিবো বলে জানান ওই প্রতিষ্ঠাতা।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, ওই স্কুলটির কোনো নিবন্ধন নেই। এটি আমাদের অধীনেও নেই। কেউ যদি অভিযোগ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।