শীত মৌসুমকে সামনে রেখে শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি হোসিয়ারী শিল্পের শ্রমিকেরা । কারখানাগুলোতে দিন রাত তৈরী হচ্ছে শীতের সোয়েটার, গেঞ্জি, কম্বলসহ বিভিন্ন পণ্য। আর উৎপাদিত এসব শীতের পোশাক যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোশাক উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এতে করে ছোট কারখানার স্বল্প পুঁজির মালিকেরা শঙ্কায় আছেন বলে জানান শহরের নয়ামাটি এলাকার ব্যবসায়ীরা।
হোসিয়ারী এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বস্ত্রখাতের উপÍখাত হোসিয়ারী শিল্প। ১৯৫০ দশকে এ হোসিয়ারী শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, কুমিল্লা, পাবনা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত প্রায় ৩ হাজারের অধিক শিল্প ইউনিট হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সদস্য। তবে এই শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৫ হাজারের অধিক। বছরে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ শ্’ কোটি টাকা হোসিয়ারী পণ্য রপ্তানীসহ দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। হোসিয়ারী শিল্পে গ্রীস্মকালে গেঞ্জি, অর্ন্তবাস এবং শীতকালে সুয়েটার, কার্ডিগান, মাফলার, টুপি, বেবীসেটসহ বিভিন্ন প্রকার হোসিয়ারী পণ্য উৎপাদন হয়। হোসিয়ারী শিল্প পুরোটাই আমদানি নির্ভর। হোসিয়ারী পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে সুই, সিংকার যাবতীয় মেশিন, সুতা, ডাইস কেমিক্যাল, জিপার, ইলাস্ট্রিক, বোতাম, কাড বোর্ড, হাড বোর্ড, পলি, টিকিট ইত্যাদি উপকরণ আমদানি করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শীতের সময় কাঁচামাল কিনে পোশাক তৈরী করেন। ওই পোশাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। মধ্যবিত্ত ও ন্ন্মিবিত্ত শ্রেণীর লোকজন তাদের পোশাক কিনে। শীতের পোশাক তৈরীতে তুলার আস্তরণ ব্যবহার করতে হয়। সেটির দাম প্রতি পাউন্ড ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। এতে পোশাক উৎপাদন খরচ অনেক বাড়ছে। বেশি দামে কাঁচামাল কিনে পোশাক তৈরী করা হলে কোন কারণে কাঁচামালের দাম কমে গেলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। বাজার স্বাভাবিক না থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকেন কাঁচামালের দাম নিয়ে।
শহরের নয়ামাটি এলাকার ফারজানা ফ্যাশনের কারিগর রবিউল জানায়, ২ মাস ধরে শীতের পোশাক তৈরী শুরু হয়েছে। তবে পোশাক তৈরীর কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
তার পাশে থাকা আরও এক হোসিয়ারী মালিক আল মামুন বলেন, পোশাক তৈরীর কাঁচামাল আস্তরণ, জিপারসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের কাছে পণ্য বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে, তাদেরকে নানাভাবে বোঝাতে হচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে পোশাক কিনতে আসা ক্রেতা দিলিপ বলেন, তাঁরা যে দামে খুচরা পোশাক বিক্রি করতেন, এখন সেই দামেই পাইকারী মার্কেট থেকে পোশাক কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে পোশাক বিক্রি করতে গেলে তাদেরকে হিমশিম খেতে হবে।
চাঁদপুর থেকে আসা ক্রেতা হোসেন বলেন, শীতের কাপড়ের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এবছর শীতের পোশাকের দাম বাড়বে। তাদেরকে বেশি দামে খুচরা বিক্রি করতে ভোগান্তি পোহাতে হবে।