নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন ঘটনার পর থেকে ৮ বছর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আবারও সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আন্তঃ জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয় নির্মাণ করা করা হয়েছে। বুধবার (২০ এপ্রিল) শ্রমিক সংগঠন আন্তঃ জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের এ কার্যালয়ের নির্মান কাজ করেন আলোচিত সাত খুনের মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই জজ মিয়ার নেতৃত্বে পরিবহন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা।
সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ, একাধিক মামলার আসামী সন্ত্রাসী জজ মিয়া ট্রাক চালক না হয়েও আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি হয়েছেন পুনঃরায় নূর হোসেনের ন্যয় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, জুয়ার আসর ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করার জন্য। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণট্রাক চালক ও টান্সপোর্ট এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর পর শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে ৮ এপ্রিল রাতে হঠাৎ করে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে শনিবার (৯ এপ্রিল) সকালে নুরুজ্জামান জজ মিয়া বিপুল সংখ্যক ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অফিস নির্মান করছিলো।
এসময় খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান।
এতে ঘর নির্মান কাজ বন্ধ থাকার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমানকে ম্যানেজ করে ২০ এপ্রিল (বুধবার) শ্রমিক সংগঠন আন্তঃজেলাট্রাক চালক ইউনিয়নের এ কার্যালয় নির্মাণ করেন জজ মিয়ার মিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা।
ট্রাক শ্রমিকরা জানান, নুরুজ্জামান জজ ওরফে ছোট মিয়াকে সভাপতি ও নূর হোসেনের আরেক ক্যাডার আক্তার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ আন্তঃ জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল শাখার নামে একটি কমিটি আনা হয়েছে।
এছাড়াও কমিটির কার্যকারী সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাত খুন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সানা উল্লা সানার ভাই জাকির হোসেন ও নূর হোসেনের যাত্রাপালা ও মাদকের নিয়ন্ত্রক ফরহাদ দেওয়ান। তবে এ কমিটির কেউইট্রাক চালক নন।
ট্রাক চালকদের দাবী, শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আবারও চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, জুয়া ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করার জন্য নুরুজ্জামান জজ মিয়া এ কমিটি নিয়ে আসছেন।
২০১৪ সালে ৭ খুনের ঘটনার পর নুর হোসেনের নিয়ন্ত্রনাধীন শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের চাঁদাবাজিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ কার্যক্রম চালু করার জন্য তৎপরতা চালিয়ে ব্যর্থ হন নুর হোসেনের দোসররা। দীর্ঘ ৮ বছর থানা পুলিশ আন্তঃজেলার কার্যক্রম পরিচালনার কোন অনুমতি দেয়নি।
এ বিষয়ে নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান জজ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ভাই নুর হোসেন চেয়ারম্যান এর আগে এ কমিটির সভাপতি ছিলো। এখন কেন্দ্রীয় কমিটি আমাকে সভাপতি করে কমিটি দিয়েছে। আমি ট্রাক চালাই না তবে, সংগঠনের মাধ্যমে ট্রাক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে চাই।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, কোন অবৈধ স্থাপনা কেউ করতে পারবে না। সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মশিউর রহমান বলেন, তারা এসপি সাহেবের কাছে গিয়েছিলো। তারা মনে হয় মৌখিক অনুমতি নিয়েই ঘরের কাজ করছে। তবে কোন চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাত খুন ঘটনার পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের অপরাধের নিয়ন্ত্রক ছিল নূর হোসেন। আন্তঃজেলাট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ে বসেই নূর হোসেনট্রাক ও গণপরিবহন, ফুটপাতের হকার, রেস্টুরেন্ট, বালুমহাল জবর দখল, এমনকি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন তিনি। সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অপরাধ সম্রাজ্য গড়ে তুলে ট্রাকের হেলপার নূর হোসেন অবৈধ পথে উপার্জন করে গডফাদার রূপে আবির্ভূত হন।
এক সময়ে তার ‘সাম্রাজ্যে’ হাত বাড়ালেই মিলতো ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। পতিতালয় চালানো, জুয়ার আসর বসানো, যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করা নূর হোসেনের ছিল বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের বিশাল ভান্ডার।