নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করেছেন, তদন্তে এই রকম তথ্য বেরিয়ে আসার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন। যদিও এর মধ্যেই তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
এসব অভিযোগ নাকচ করে অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলছেন, ”আমি যদি পদ থেকে সরে দাঁড়াই, সেটাই হবে (তদন্তে) সবচেয়ে ভালো ভাবে সহায়তা করা”। তার এই পদত্যাগ ১৪ দিন পরে কার্যকর হবে।
অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পর গভর্নরের দায়িত্ব নেবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যাথি হকুল। মিজ হকুল হতে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব নেয়া প্রথম নারী।
অভিযোগ ওঠার পর থেকেই অ্যান্ড্রু কুয়োমো সহযোগী বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতার কাছ থেকে পদত্যাগের চাপের মধ্যে ছিলেন। এদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রয়েছেন।
এক বছর আগেও যখন তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন টেলিভিশনে বিস্তারিত তুলে ধরতেন, তখন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে প্রশংসা করতেন।
কেলেঙ্কারির জের ধরে একের পর এক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য হওয়া টানা তৃতীয় গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস তদন্ত করে দেখতে পায় যে, ৬৩ বছরের অ্যান্ড্রু কুয়োমো ১১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করেছেন, যাদের মধ্যে অঙ্গরাজ্যটির কর্মীরাও রয়েছেন। নারীরা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, আপত্তিকর স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরেছেন এবং সম্মতি ছাড়াই চুমু খেয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের পর অনেক ডেমোক্রেটিক সদস্যও অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিপক্ষে চলে যান, যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সিনেট নেতা চাক শুমার এবং নিউইয়র্কের দুইজন সিনেটর।
নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক সদস্যরা তাকে অভিশংসন করার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন। পদত্যাগ করলেও যৌন হয়রানির এসব অভিযোগ ধরে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত করা হবে।
মঙ্গলবার যখন পদত্যাগের ঘোষণা দেন অ্যান্ড্রু কুয়োমো, তিনি বরাবরের মতোই যৌন হয়রানির অভিযোগগুলো নাকচ করে দেন। তবে তিনি বলেছেন, তার কর্মকাণ্ডের ফলে যেসব নারীরা আহত হয়েছেন, তাদের কাছে তিনি গভীর, গভীরভাবে ক্ষমা চান।
তিনি বলেছেন, এসব বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান, কারণ তার বিশ্বাস রাজনৈতিক কারণে এসব ঘটছে। তার দাবী, তিনি পদত্যাগ করছেন এই কারণে যেভাবে কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়গুলো ঘটছে, তাতে মাসের পর মাস ধরে বিভ্রান্তি ছড়াবে এবং করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হবে।
অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলছেন, নিজের মেয়েদের সঙ্গেও তার সম্পর্কের ওপর এসব অভিযোগের প্রভাব পড়ছে। ”আমি তাদের সঙ্গে যখন সোফায় বসে দিনের পর দিন এসব অভিযোগ শুনেছি, তাদের চোখের দিকে যখন তাকিয়েছি, তাদের চেহারা দেখেছি, সেটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে।”
তিনি তাদের বলেছেন, এসব কাজ তিনি কখনোই করেননি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে একজন নারীকে কখনোই অসম্মান করেননি।
অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পদত্যাগের ঘোষণার পর গভর্নরের দীর্ঘদিনের একজন সমালোচক নিউইয়র্কের সিটি মেয়র বিল ডে বালাসো বলেন, পদত্যাগ করার জন্য তার দেরি হয়ে গেছে।
”আমি গভর্নরের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই,” হোয়াইট হাউজে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন পাসকি বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট তার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেননি এবং পদত্যাগের বিষয়েও আগাম কোন নোটিশ দেয়া হয়নি।
অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পদত্যাগের পর তার ছোট ভাই সিএনএনের উপস্থাপক ক্রিস কুয়োমোর পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ক্রিস কুয়োমোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
সুত্র:বিবিসি বাংলা