মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি শুনে দূর্জয় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে ফজরের নামজ পড়তে। নামাজ শেষ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে জগিং করতে। এটা দূর্জয়ের দৈনন্দিন কাজের রুটিন। যৌবনকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়তই শারীরিক কসরত করে থাকে। সকালের পাতভ্রমন শেষ করে সংসারের জন্য বাজারে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার ক্রয় করে বাসায় ফিরে তার স্ত্রী পারুলের হাতে তুলে দেন। আক্ষেপ করে বলেন দিন দিন দ্রব্যমূল্য যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বেতনের টাকা দিয়ে খেয়ে দেয়ে সন্তানদের লেখাপড়া চালানো কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। পারুল হা সূচক মাথা নেড়ে বাজার নিয়ে রান্না ঘরের উদ্যেশ্যে চলে যান। দূর্জয় ঘামে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছেলে অভি ও মেয়ে অন্তরাকে ডেকে পড়ার টেবিলে বসতে বলে বারান্দায় চেয়ারে বসে খবরের কাগজ নিয়ে পড়তে থাকেন। আজ ছুটির দিন থাকায় ব্যস্ততা নেই বলে ছুটির দিনটা পরিবারের সাথে হাসি আনন্দে কাটাবে। বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে বের হবে। কাজের ব্যস্ততার জন্য অনেকদিন হয় পারুল ও সন্তানদের নিয়ে কোথায় বেড়াতে যাওয়া হয়নি। তাই আজকের দিনটি কারো জন্য নয় শুধু পরিবারের জন্য এ কথা ভাবতেই
পারুল চা তৈরি করে নিয়ে আসে সেই সাথে কিছু বিস্কুট দূর্জয়ের সামনে রাখে। দূর্জয় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিতেই দেখে ঝিড়ঝিড় বৃষ্টি ঝড়ছে।
বৃষ্টির ফোটা পড়তেই দূর্জয় পারুলের দিকে তাকিয়ে বলে বৃষ্টি কখন থামবে ঠিক নেই। তুমি ঘরের জানালাগুলো ভালো করে বন্ধ করে দাও নয়তো বৃষ্টির পানির ছিটে দমকা হাওয়ায় ঘরে আসতে পারে। পারুল মৃদু কন্ঠে উত্তর দেয় আচ্ছা ঠিক আছে।
দৃর্জয় বলে পারুলকে যাও কাজ শেষ করে এসো দুজন মিলে বৃষ্টির আবহাওয়া উপভোগ করবো আর গল্প করবো।
পারুল দূর্জয়ের রোমান্টিক কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে এই বয়সেও তোমার রোমান্টিকতা কমেনি।
পারুল চেয়ারে বসে বারান্দার বাহিরে তাকিয়ে থাকে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসে গাছের পাতাগুলো দৌল খাচ্ছে। অপরুপ এক সৌন্দর্য খেলা করছে বৃষ্টি আর প্রকৃতি। এমন সময় অভি বলে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ভিজে ফুটবল খেলবো। দূর্জয় অভিকে বলে আচ্ছা ভিজবে ঠিক আছে আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। বলো তো আমাদের দেশ কয় ঋতুর দেশ। এবং বাংলা মাসের নাম কি কি আর এখন বাংলার কোন ঋতু ও কোন মাস ।
অভি উত্তরে বলে কেনো আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ গ্রীস্ম, বর্ষা, শরৎ,হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। আর মাস হলো বৈশাখ, জোষ্ঠ,আষাঢ়, শ্রাবন,ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রাহায়ন,পৌষ ও মাঘ, ফাল্গুণ ও চৈত্র। তবে এখন ঋতু চলছে বর্ষা কাল আর মাস শ্রাবণ।
ছেলের কথা শুনে দূর্জয় অনেক খুশি হয়ে বলে হা তুমি ঠিক বলেছো
তবে আমি চিন্তা করে পাচ্ছিনা সবাই ইংরেজি মাসের নামগুলো জানে আর তুমি আমাদের ঋতু ও মাসগুলোর নাম সঠিক বললে কি করে। অভি বিজয়ের হাসি দিয়ে বলে বাবা তুমি যে সংবাদ পত্র পড়ার জন্য বাসায় রাখো তুমি অফিসে চলে যাবার পর আমি পড়ে থাকি। তাই আমার কাছে সহজ হয়েছে। কারন তুমি আমাকে শিক্ষা দিয়েছো দেশকে, দেশের ভাষাকে ও দেশের মানুষকে আগে ভালোবাসতে হবে। আমাদের কৃষ্টি কালচারালকে বুকে ধারন করতে হবে তবেই আমরা প্রকৃত বাঙালি হতে পারবো এবং আমাদের মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করে শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে। সন্তানের কথা শুনে দৃর্জয় স্ত্রী পারুলকে বলে শুনেছো অভির কথা। আমি বাবা হিসাবে গর্ববোধ করছি।
অভি বাড়ির উঠনে গিয়ে খেলতে শুরু করে। ভাই কে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অন্তরা ভাইয়া আমিও তোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজে খেলবো এই বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে। ভাই বোন দুজন বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দে ফুটবল নিয়ে খেলতে থাকে।
দূর্জয় পারুল কে বলে।
পারুল শুনছো
পারুন উত্তরে বলে জি বলুন
আচ্ছা তোমার কি আমাদের বিয়ের পর কোন বৃষ্টির দিনের কথা মনে আছে।
পারুল কেনো বলুন তো।
না এমনি। কোন এক স্মৃতি যা বৃষ্টি হলেই স্মরন করিয়ে দেই।
কেনো মনে থাকবে না হয়তো বয়স বেড়ে গেছে তাই বলে তো স্মৃতি ভূলে থাকবার নয়। জীবনের অনেক আনন্দ বেদনার দিনগুলো এখনো স্মৃতি হয়ে ফিরে আসে।
এই শ্রাবন মাসের কোন একদিন আমরা বের হলাম ঘুরতে। বৃষ্টির জলে রাস্তার চারপাশে জলে থৈথৈ করছে। হাটতে গিয়ে চোখে পড়লো বিলের জলে ভেসে আছে শাপলা ফুল। আমি তোমার কাছে বায়না ধরলাম আমাকে শাপলার ও বিলে নিয়ে যাবে। তুমি বললে ওখানে যেতে হলে নৌকা দিয়ে যেতে হবে। আমরা নৌকা পাবো কোথায়। আমি বললাম এতকিছু জানিনা তুমি সাতার কেটে হলেও আমার জন্য শাপলা নিয়ে আস। তুমি তো হতভম্ব হয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে। এর মধ্যে একটি লোক নৌকা নিয়ে এসে বললো স্যার শাপলা বিলে যাবেন। আমি নিয়ে যাবো তবে আমাকে ২শত টাকা দিতে হবে নৌকার ভাড়া বাবদ। তোমার মুখটি যেনো মেঘের অন্ধকার কেটে আলো জ্বললো। আর আমি তো মহা আনন্দে তোমার হাতটি চেপে ধরে বললাম চলোনা যাই। তুমি কোন সাড়াশব্দ না করে আমাকে নৌকায় উঠিয়ে ছেলেটিকে বললে চলো শাপলা বিলে।
চারদিকে শাপলা ফুল দেখে আমি হাত বাড়িয়ে ছুতে গেলাম। আর তুমি একটি শাপলা ফুল ছিড়ে আমার চুলের খোঁপায় পড়িয়ে দিলে। আমার মনের ভিতর কেমন যেনো ভালোলাগা দৌলা দিয়ে গেলো যা তোমাকে মুখের ভাষাতে প্রকাশ করতে পারিনি।
বিল থেকে ফিরতেই রাস্তায় আমাদের বৃষ্টি পেয়ে বসলো। আমরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজিয়ে বাড়ির দিকে আসতে থাকলাম। বৃষ্টির জলে মাটি ভিজে পিচলে হয়ে গেছে আমি হাটতে গিয়ে পা পিছলে গিয়ে পা মচকে ফেলি। আর হাটতে পারছিলাম না তুমি আমার এ অবস্থা দেখে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে পথ হাটতে শুরু করলে আমি পড়ে যাবার ভয়ে তোমাকে শক্ত করে গলায় জড়িয়ে ধরি। তোমার আমার প্রতি সেই শ্রাবন মেঘের দিনের ভালোবাসা কি করে ভুলবো বলো। আমার এখনো স্বাদ জাগে চলো আবার সেই শাপলা বিলে যাই অঝোর বৃষ্টিতে ভিজি দুজন। বৃষ্টির জলে হারিয়ে যাই আমাদের ভালোবাসার দিনগুলোতে।
দূর্জয় পারুলের কথা শুনে হাতটি ধরে বলে এখন তো শাপলা বিলে যাওয়া হবে না বরং চলো বাহিরে বৃষ্টির জলে আমরাও সন্তানদের সাথে ভিজি। আজ হবে আমাদের বৃষ্টি ভেজার দিন। শ্রাবন মেঘের জলে ভিকে গান গাইবো ” আজ এই বাদলা দিনে, ঘরে আমার মন নাহি বসে, বৃষ্টির ছন্দে হারিয়ে যাবো, ভালোবাসা দিবো উজাড় করে……..।