এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
Shahalam Molla
  • আপডেট : মার্চ, ৩০, ২০২৪, ৯:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ১৯৮৯১২ ১৯ বার দেখেছে

বর্ণান্ধদের জন্য ‘ভাইব্রেন্ট’ গ্লাস আবিষ্কার করলেন সাইফ

Shahalam Molla
  • আপডেট : নভেম্বর, ১৫, ২০২২, ৯:২৬ অপরাহ্ণ
  • ৩৪৯ ১৯ বার দেখেছে
বর্ণান্ধদের জন্য ‘ভাইব্রেন্ট’ গ্লাস আবিষ্কার করলেন সাইফ

কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার সাইফ উদ্দিন আহমেদ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পড়ছেন। তিনি কালার ব্লাইন্ডদের জন্য একটি গ্লাস আবিষ্কার করেছেন। যার নাম ‘ভাইব্রেন্ট’। যে গ্লাসের তৈরি চশমা দিয়ে কালার ব্লাইন্ডরা পৃথিবীকে রঙিনভাবে দেখতে পারবেন। তারা শনাক্ত করতে পারবেন বিভিন্ন রং।

 

সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ভাইব্রেন্ট গ্লাসের তৈরি চশমাটি পড়ে কালার ব্লাইন্ড ব্যক্তিরা সহজেই বিভিন্ন রং চিহ্নিত করতে পারবে। এই চশমাটি পড়ে তারা পৃথিবীকে রঙিনভাবে দেখতে পারবেন। আমার চশমাটি পড়ে সহজেই ইশারা টেস্টে থাকা নাম্বার দেখতে পারবে। তারা লাল ও সবুজ রং সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন।

 

তিনি আরও বলেন, আমেরিকার একটি তালিকা অনুযায়ী প্রতি দশজনের একজন কালার ব্লাইন্ড। আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে একটি জরিপ করেছি। সে জরিপে আমি দেখেছি প্রথম ২৬ জনের মধ্যে দুইজন কালার ব্লাইন্ড। ৪০ মিনিট জরিপের মধ্যে ছয়জন কালার ব্লাইন্ড পেয়েছি। আমাদের বাংলাদেশে এ ব্যাপারে কোনো সচেতনতা নেই। অথচ রং দিয়েই আমাদের পড়ালেখা শুরু হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে থাকে কালার ব্লাইন্ডনেসের কারণে।

 

কালার ব্লাইন্ডে আক্রান্ত হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ২০১৯ সালে আমি যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমিতে পরীক্ষা দেই। কিন্তু যখন আমার ফাইনাল মেডিকেল টেস্ট হয় তখন আমি জানতে পারি আমি কালার ব্লাইন্ড। তখন আমার জীবনে কালো অধ্যায় নেমে আসে। একবছর আমি কোথাও ভর্তি হইনি। নানা ডাক্তারের কাছে গিয়েছি চিকিৎসার জন্য। তখন আমি জানতে পারি কালার ব্লাইন্ডের কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। তখন আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।

 

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে আমেরিকার একটি কোম্পানি একটি গ্লাস তৈরি করে যা দ্বারা কালার ব্লাইন্ডরা ইশারা টেস্টে নাম্বার দেখতে পারছে। রঙকে তারা দেখতে পারছে। তারপর থেকেই আমি একবছর বাসায় থেকে কালার ব্লাইন্ড নিয়ে জানার চেষ্টা করি। কিভাবে হয় দেশে কোনো ট্রিটমেন্ট আছে কিনা। তখন জানতে পারি এই কালার ব্লাইন্ডদের কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। অস্থায়ী ট্রিটমেন্ট শুধু আমেরিকাতে আছে ইকমার গ্লাস। তারপর আমি সেটা অর্ডার করি কিন্তু আমি সেখানে প্রতারণার স্বীকার হই।

 

‘আমার ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টে অ্যাডমিশন নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো কিছু একটা করা। আমি দেখেছি নতুন রোগ আসলে ফার্মাসিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর তখনই আমার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় আমি কালার ব্লাইন্ড নিয়ে কিছু করবো। যাতে আমার মতো কারও স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়। আমি যে গ্লাস তৈরি করেছি এটা তৈরি করতে আমাকে তিনবছর ধরে গবেষণা করতে হয়েছে। আমি গ্লাসটা নিয়ে জরিপ করেছি। এটি দিয়ে কালার ব্লাইন্ডরা সহজেই রং চিহ্নিত করতে পারছে।

 

গ্লাসের কার্যক্ষমতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাইফুদ্দিন বলেন, গত ৯ নভেম্বর আমাদের ভার্সিটিতে ফার্মাফেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা আমাদের ভার্সিটির মধ্যে বড় একটি প্রোগ্রাম। এখানে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকে। সেখানে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার ফ্যাকাল্টিরা এসে যাচাই করে দেখেছে আমার গ্লাস কাজ করছে। তারা জরিপ করে দেখেছে আমার ভাইব্রেন্ট গ্লাস দিয়ে তৈরি কালার ব্লাইন্ডরা রং শনাক্ত করতে পারছেন।

 

বর্তমানে তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি চাচ্ছি স্বল্পমূল্যে এটি কালার ব্লাইন্ডদের কাছে পৌঁছে দিতে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো। যদি কেউ যাচাই করে দেখতেও চায় তাহলে আমি প্রমাণ করে দেখাবো। আমি চাই না যেন আমার মতো কারও স্বপ্নভঙ্গ হয়। তারা পৃথিবীকে রঙিনভাবে দেখুক। আমি আমার এই আবিষ্কারকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই।

 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সাইন্সের অধ্যাপক ড. হাসান মাহমুদ রেজা বলেন, সাইফুদ্দিন একটি লেন্স কালার করেছে। এটা নিয়ে সে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতদিন পর এর ফল পেয়েছে। তার তৈরি করা লেন্সটি ব্যবহার করে কালার ব্লাইন্ডরা সহজে দেখতে পারছে। সাধারণত যারা কালার ব্লাইন্ড তারা লাল ও সবুজ শনাক্ত করতে পারে না। কালার ব্লাইন্ডদের জন্য কোনো ওষুধ নেই। কিন্তু তার চশমাটি দিয়ে কালার ব্লাইন্ডদের সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এটা তার আবিষ্কার। তবে এটা কতটা মৌলিক আবিষ্কার সেটা আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে এটার মাধ্যমে যারা কালার ব্লাইন্ড আছে তারা অল্প খরচে সমস্যা দূর করতে পারবে। এটা একটা ভাল কাজ।

 

তিনি আরও বলেন, সাইফুদ্দিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার এই অর্জন আমাদের জন্য অবশ্যই ভাল দিক। আমরা সম্প্রতি একটি ফার্মাফেস্ট করেছি। সেখানে সে তার উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। আমি তার সফলতা কামনা করি।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করে সবাই কে দেখার সুযোগ করে দিন
      
 
   

এ খবরটি আপনার বন্ধুকে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2020 sabarkantho
Design & Developed BY:Host cell BD
asterpress