ফতুল্লায় সুদের টাকার জন্য নবজাতক সন্তান বিক্রি নিয়ে ধ্রমজাল সৃষ্টি হয়েছে। রানী ও লাকি বেগমের পাল্টা পাল্টি বক্তব্যে বিষযটি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃস্টি হয়েছে। তবে রানীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ লাকী বেগমের মা, বাবা ও রুবিনা নামে এক দাইকে আটক করেছে। রানী স্বেচ্ছায় তার নবজাতক সন্তান বিক্রি করলেও এক বছর পর সে অভিযোগ করছে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার সন্তান বিক্রি করা হয়েছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত লাকী বেগম বলছেন তার কাছ থেকে রানী সুদে কোন টাকা নেয়নি। পুরো বিষয়টি বানোয়াট। আর প্রতিবেশীরা বলছে, রানী তার সন্তান বিক্রির টাকা দিয়ে বাসায় নতুন খাট ও টিভি কিনেছে।
রানী ও লাকী বেগম উভয়ে ফতুল্লার আলীগঞ্জ পিডবিøউটিএর করোনীতে ভাড়ায় বসবাস করে। এরমধ্যে রানী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাদারতলীর হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। হানান চৌকিদার রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। লাকী বেগমের স্বামীর নাম হযরত আলী। তিনি সরকারী চাকরী করেন। ক্লিনিয়ার পদে।
ফতুল্লা মডেল থানায় দেয়া রানী অভিযোগ দিয়ে বলেছেন, দুই বছর পূর্বে লাকী বেগমের নিকট থেকে সে ৫ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করে। গত ২ বছরে ওই টাকার বিপরীতে লাকী বেগমকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করে। এমনকি এক বছর পূর্বে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েও সম্পূর্ন টাকা আত্মসাৎ করে লাকী বেগম। পরবর্তীতে আবার বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) পুনরায় লাকী বেগম তার বাড়ীতে এসে আসল এবং সুদসহ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবী করে অন্যথায় তাকে মারধর করা হবে।
বাদী রানী জানায়, এক বছর পূর্বে ভোর পাঁচটার দিকে তার গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ওইদিন বিকেল পাঁচটার দিকে সুদের টাকা পরিশোধে তারা তার নবজাতক সন্তানকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। বিক্রিত টাকার পরিবর্তে লাকী তাকে একটি পুরাতন খাট এবং একটি পুরাতন টিভি দিয়েছিলো এবং সুদের টাকা কেটে নিয়েছিলো। তাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
তবে লাকী বেগম জানান, রানী তার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। সেখানে সুদের তো প্রশ্নই আসে না। তবে রানীর স্বামী হান্নান চৌকিদার বহুদিন আগে টাকা নিয়েছিল আবার পরিশোধও করে দিয়েছে।
রানীর নবজাতক সন্তান বিক্রির বিষয়ে লাকী বেগম বলেন, রানীর স্বামী আরেকটা বিয়ে করছে। রানীর কোন খোঁজ খবর নেয় না। এক বছর আগে রানীর গর্ভে সন্তান আসার পর রানী অনেকটা হতাশায় ভোগে। আমি তাকে বললাম তোর স্বামীর সাথে তো তোর এখন সম্পর্ক নাই। এই বাচ্চা কি করবি। রানী বলে আমার তো কাজ কাম কইয়া খাইতে হইবো। যেহেতু সে আমার খোঁজ খবর লয় না। আফা আমি এখন কি করমু এই বাচ্চা নিয়ে। আমি এই বাচ্চা বিক্রি কইরা ফালামু। তখন আমি বলি বাচ্চা যে বিক্রি করবি কোন মানুষ ভাও টাও করছোস। তখন সে বলে আফা না কোন মানুষ ভাও করি নাই। তয় আমি বাচ্চা বেইচা ফালামু। তখন আমি বলি তোর বাচ্চা বেচবি না কি করবি হেইডা তোর বুঝ। একদিন ভোররাইতে ওর বাচ্চা হইবো। আমি পাশের বাড়ির দাই বেডি ( রুবিয়া বেগম)কে ডাক দিয়া আনলাম। বাচ্চা হইলো। পরে রানী বলে আফা এখন দেখেন কেউ বাচ্চা নিবো কি না। ওর বাচ্চা হয়েছে শুনে পাশের বাসার হাবিল চাচার বৌ আসছে। তখন হাবিল চাচার বৌ বলে বাচ্চা কি রাখবি না কি করবি। তখন রানী বলে না খালা বাচ্চা বেইচ্চা দিুম। পোলার বাপে কইছে বাচ্চা বিক্রি করে দিতে। তারপর পাশের এক ভাড়াটিয়ার কাছে ২৫ হাজার টাকায় রানী তার বাচ্চা বিক্রি করে দেয়। আমিও রানীর সাথে গিয়েছি। যেদিন বাচ্চা হয়েছে সেদিনই সে বাচ্চা বিক্রি করে দিয়েছে। হাবিল চাচার বৌসহ অনেকেই বিষয়টি জানে।
এদিকে প্রতিবেশীরা জানায়, বাচ্চা বিক্রি করে রানী নতুন খাট ও টিভি কিনেছে। তাছাড়া তার স্বামী হানান দ্বিতীয় বিয়ে করে বৌ নিয়ে পিরোজপুরে থাকে। রানীর কোন খোঁজ নেয় না।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে লাকী বেগমের মা, বাবা ও একজন দাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাকী ও রানীকে মুখোমুখি করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তাতে বুঝা যাবে রানী স্বেচ্ছায় নাকি দ্জুন মিলেই নবজাতক শিশু সন্তানকে বিক্রি করেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।