ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও বাঁধের আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বিশুদ্ধ পানি ও গবাদিপশুর খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাড়ছে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের তিনটি পয়েন্টেই পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সদরের মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধিতে ফরিদপুর সদরের তিনটি, চরভদ্রাসনের চারটি, সদরপুরের দুটি এবং ভাঙ্গার একটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ১০ ইউনিয়নের ২৩৪ গ্রামের ১৮ হাজার ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এই সকল এলাকার প্রায় দেড়শতাধিক গ্রামে ফসলি খেত, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুরের বিভিন্ন অংশে।
ইতোমধ্যে সরকারিভাবে এই সকল এলাকায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে নয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলার মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়ায় প্রতিদিনই ফসলের জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হচ্ছে। এছাড়াও ফরিদপুর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রীরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, পানিবন্দি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে
অপর জেলা রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৩টি ইউনিয়নের ৬৩ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার, শিশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সব মিলে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১,০ে৪৫ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে রোপা আমন, রোপা আউশ, আগাম সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে এই পানি না কমলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ বলেন, “উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি বাড়ছে। এতে কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলানো অব্যাহত রয়েছে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, “জেলার পাঁচটি উপজেলার বানভাসি মানুষের জন্য ২১৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।”