নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দুই বিএনপি নেতা। রবিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। রবিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সাখাওয়াত হোসেন। পরে পৌনে ২টার দিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এটিএম কামাল। তাদের দু’জনের সাথেই স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়ন সংগ্রহের পর বিএনপির দুই নেতাই সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেছেন। তারা উভয়ই বলেছেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে নীতিগত সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দলের তাতে কোনো আপত্তি নেই। দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তকেই তারা সম্মান জানাবেন। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি করে তাহলে তারা নির্বাচন করবেন না।
এদিকে তফসিল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সিটি নির্বাচনে এবার প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। ইভিএম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা দুই বিএনপি নেতা। অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে সিটি নির্বাচনে ইভিএম প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। এটিএম কামালও বলেছেন, ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি জনগণের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর নাসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ভোটগ্রহণ হবে আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে ইতোমধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধাবে পরাজিত করেছিলেন নৌকার প্রার্থী ডা. আইভী। এবারের নির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকান্ড মেয়র আইভীকে ভোটের মাঠে এগিয়ে রেখেছে বলে অভিমত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই সিটিতে ভোট হবে শতভাগ ইভিএমে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা৷ এর আগে তার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২০ ডিসেম্বর এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি৷
উল্লেখ্য, এটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় দফার নির্বাচন। এর আগে দ্বিতীয় দফায় গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন ডা. আইভী। ২০০৩ সালে প্রথম পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এবারও নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ডা. আইভী। তিনি ছাড়াই আওয়ামী লীগের আরও তিন নেতা ফরম সংগ্রহ করেছেন।
প্রথমবার ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়। ২০১৬ সালে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে এবং এবার ভোট হবে ইভিএমে পুরো সিটিতে। প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয় এ সিটিতে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।