নাসিকের সরবরাহকৃত ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি-ই নগরীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। ওয়াসার দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরেও নিরাপদ ও সুপেও পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি নাসিক। কবে নাগাদ নিরাপদ পানি পাবে নগরবাসী তা নিদিষ্ট করে বলতে পারছে না নাসিক। যদিও দায়িত্ব নেয়ার পর নাসিক মেয়র বলেছিলেন, নাসিক যখন ওয়াসা দায়িত্ব নিবে, তখন থেকে ২ বছরের মধ্যে সুপেয় পানি দিতে পারব।
এদিকে নাসিকের সরবরাহকৃত ময়লা ও দূর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়লা পানি দিয়ে গোসলে বাচ্চাদের চর্মরোগ হচ্ছে। বড়রাও আক্রান্ত হচ্ছেন রোগব্যাধিতে। ফলে নগরবাসী খাবার পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াসার পরিবর্তে আশপাশের মসজিদ ও ডিপ টিউবওয়েল লাগানো বাড়ির দারস্থ হচ্ছেন। কেউ আবার খাবার পানি কিনে খাচ্ছেন। ফলে সুপেয় পানি না পেয়েও পানির বিল পরিশোধ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী।
১০ নং ওয়ার্ডের হানিফ মিয়া জানান, ওয়াসার পানির অবস্থা খুবই খারাপ। ময়লা ও দুর্গন্ধ পানি পান করা যায় না। কাপড়-চোপড় ধোয়া আর গোসল ছাড়া কিছুই করা যায় না। কষ্ট হলেও প্রতিদিন মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করি।
১৭ নাম্বার ওয়ার্ডের নলুয়া পাড়ার রেহানা বেগম জানান, ওয়াসার পানিতে লালসা লালসা। দুর্গন্ধ মুখে দেওয়া যায় না। পানি ফুটিয়েও খাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমরা কষ্ট করে মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছি।
সিদ্ধিরগঞ্জে ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৃহবধূ নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ওয়াসার পানিতে থাকে ময়লা। এই পানি কি খাওয়া যায়? ফুটাইয়াও পানি খাওয়া যায় না। কিন্তু গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করি। এখন রমজান মাসে বেশি পানির প্রয়োজন হয়। বিগত কয়েকদিন যাবৎ পানি স্বাভাবিক ভাবে রিজার্ভ ট্যাংকে আসছে না। নিরুপায় হয়ে আমরা মোটরের মাধ্যমে পানি টেনে রিজার্ভ ট্যাংকে আনি। এতে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাচ্ছে।
বন্দরের ২২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিজান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে যে পানি আসে সে পানি খাওয়া যায় না। আমরা প্রতিবেশীদের ডিপ টিউবওয়েলের পানি এনে ব্যবহার করি। পানির কষ্ট করলেও পানির বিল পরিশোধ করতে হয় আমাদের।
ইফতারের পর শহরের খাবার হোটেল আলম কেবিনে মুখ ধোয়ার সময় পানিতে গন্ধ পেয়ে ইমন নামে এক কাস্টমার বিষয়টি জানতে চাইলে হোটেল বয় বলে ভাই আমাদের কিছু করার নাই। এটা ওয়াসার পানি। ইমনের বক্তব্য হচ্ছে পানি থেকে ড্রেনের পানির গন্ধ আসছিল।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করেপারেশনের পানি সরবরাহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ পারভেজ এই বিষয়ে বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সব জায়গায় নিরাপদ পানি পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পানির লাইনগুলো অনেক পুরাতন হওয়ায় লিকেজের কারণে পানিতে মাঝেমধ্যে ময়লা ঢুকে। তবে সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে নিরাপদ পানি পৌছে দেওয়ার লক্ষে একটি প্রকল্পের কাজ শীগ্রই শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে ওয়াসা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় নাসিক।
চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মডস জোন পরিচালনা করবে নাসিক। ওই সময় বলা হয়, আগামী এক বছর ঢাকা ওয়াসা জনবল এবং কারিগরি বিষয়ে নাসিককে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
সমাঝোতা চুক্তি সাক্ষরের সময় নাসিকের পক্ষে মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ঢাকা ওয়াসার পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দীন।
ওই সময় নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতায় আসবে এটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিভিন্ন সংগঠনও এ দাবি করে আসছিল। দাতা সংস্থাগুলো আমাদের সাথে এখন যোগাযোগ করছে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য। পানি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলছে। নাসিক যখন ওয়াসা দায়িত্ব নিবে, তখন থেকে ২ বছরের মধ্যে সুপেয় পানি দিতে পারব। এর জন্য ঢাকা ওয়াসার সকল প্রধান প্রধান সড়কের পানি পাইপ নতুনত্ব করা উদ্যোগ নেয়া হবে।
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেছিলেন, পানি ব্যবস্থাপনায় ওয়াসার দক্ষতার জন্যই ১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জের পানি ব্যবস্থাপনা ঢাকা ওয়াসাকে দেয়া হয়েছিল। আমরা এখন শতভাগ পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। আশা রাখি নাসিক তাদের মতো করে পানি ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সাথে করতে পারবে। কিন্তু আড়াই বছরেও নাসিক নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারেনি। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিই নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী।