নারায়ণগঞ্জে ১৬৬৫ জন যক্ষা রোগী রয়েছে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এই জেলায় সংক্রমন ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি। অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষ।
যক্ষা রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ঘরে তুলার লক্ষে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ সব তথ্য দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান।
তিনি জানান, যক্ষা বা টিবি একটি বায়ুবাহিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। য²ায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই কিন্তু যক্ষার জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষার জীবাণু ছড়ায়। এ জীবাণু বেশ কয়েক ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে বাতাসে ভেসে থাকা এ জীবাণু। এভাবেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। প্রতি এক জন রোগী পরিবার, স্বজন ও আশপাশের অন্তত ১০ জনের মধ্যে সংক্রমন ছড়াতে পারে। সারাদেশে গড়ে ১ বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ২৮০ জন মানুষ বসবাস করলেও নারায়ণগঞ্জে বসবাস করে ৫ হাজার ৭৮০ জন। এ জেলায় মানুষের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সংক্রমন ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে যক্ষা বিষয়ে সচেতন হওয়া বেশি জরুরী।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জে মোট জনসংখ্যা ৪৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। এর মধ্যে ১৬৬৫ জন যক্ষা রোগী রয়েছে। আড়াইহাজারে আক্রান্ত রয়েছে ১৮৩ জন, বন্দরে ১১২ জন, সদর উপজেলায় ৬৩৮ জন, রূপগঞ্জে ২৯৪ জন ও সোনারগাঁয়ে ২৩৪ জন আক্রান্ত। আক্রান্ত রোগীদের ৯৭ শতাংশ সুস্থ্য সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছে আর মারা যাচ্ছে ২ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা প্রতিরোধ সমিতির নারায়গঞ্জের আয়োজনে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু সড়কের পলি ক্লিনিকের অডিটোরিয়ামে। সভাপতিত্ব করেন নাটাবের সেক্রেটারী মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী।
সরকারের পাশাপাশি যক্ষা প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জে কাজ করছে ব্র্যাক।
ব্র্যাক এর নারায়ণগঞ্জের ফিল্ড অর্গানাইজার শাহ আলম জানান, যক্ষা একটি ব্যয় বহুল চিকিৎসা। কিন্তু আক্রান্তের ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র থাকে। তাই সঠিক চিকিৎসা নিতে পারতো না। বাংলাদেশ সরকার এই ব্যয় বহুল চিকিৎসাকে বিনামূল্যে করে দিয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতনতার অভাবে হাঁচি-কাশি হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসকের নিকট যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি আরও বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহ, বিকেএমইএ‘র কারখানা গুলোতে বিনামূল্যে যক্ষার পরীক্ষা ও যক্ষারোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
সভায় নারায়ণগঞ্জে কর্মরত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।