কোন ভাবেই নিরসন করা যাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দলীয় কোন্দল। দ্বাদশ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ঐক্য হওয়ার বদলে উল্টো দলীয় কোন্দল ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সম্প্রতি, জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে পূর্বে বহাল থাকা সভাপতি আঃ হাই এবং আবু হাসনাত শহীদ বাদলকেই পূর্নঃবহাল রাখা হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘদীনের কোন্দল নিরসন হবে বলে ধারনা করা হলেও তা শুধু তৃনমূল আওয়ামীলীগের স্বপ্ন বলেও মনে করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এই দুই নেতার আলাদা ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করার মাধ্যমে নতুন কমিটির কোন্দল আবারো প্রকাশ্যে চলে আসে। নির্বাচনের আগমুহুর্তে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তা দলের জন্য মঙ্গলকর নয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে যদি এ অবস্থা চলমান থাকে তাহলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। জানা যায়, দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসীন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ধারণা করেছিল আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে একক ভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসন হবে। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়াসহ এই প্রথম নারায়ণগঞ্জ থেকে মন্ত্রী হিসেবে গোলাম দস্তজীর গাজীর শপথের মাধ্যমে জেলাবাসীর দীর্ঘদীনের স্বপ্ন পূর্ণতা লাভ করেছে। একজন পূর্নমন্ত্রী পাওয়ায় আওয়ামীলীগের মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মনে প্রাণে ভেবেছিল নারায়ণগঞ্জের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জনপ্রতিনিধিরা অতীতের সকল মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে।
আওয়ামীলীগের ৩ এমপির পাশাপাশি জাতীয়পার্টির দুই এমপিও নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে একহয়ে কাজ করার অঙ্গিকার করেছিল। সদর-বন্দর আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান জনপ্রতিনিধিদের এক টেবিলে বসার আহবান জানিয়েও কোন সারা পাননি। নির্বাচনের পর যে আশা নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল তা দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আওয়ামীলীগ একসাথে পালন না করায় সাধারণ নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পর মন্ত্রী সভায় নারায়ণগঞ্জের গোলাম দস্তগীর গাজী ঠাঁই পাওয়ার পর দিন যত যাচ্ছে দলে অনৈক্য দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। অথচ নেতা-কর্মীরা ভেবেছিল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব নিরসন হতে চলছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে মহাজোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভের নেপথ্যে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে কাজ করেছিলেন। অতীতের বিভেদ ভুলে দলীয় প্রধানের নির্দেশে নির্বাচনী মাঠে কাজ করায় মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পেরেছেন। আর প্রার্থীদের বিজয়ী করার পর বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ঐক্যের সুবাতাস বইবে এমনটা সকলের কাম্য থাকলেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে দ্বিধা বিভক্তি আরো বাড়ছে। ইতিমধ্যে, সম্মেলনের পর পরই জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আসা প্রধান দুই নেতার আলাদা আলাদা ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন জানানো নিয়ে আওয়ামীলীগে দ্বিধা বিভক্তি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী মনে করে এই বিভাজনের ফলে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে বিএনপির যে ভরাডুবি ঘটেছিল আওয়ামীলীগের দৃশ্যমান কোন্দলের কারণে বিএনপি নারায়ণগঞ্জে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে এখানকার জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থ হলে ইতিহাসের পাতায় তারা ভিন্ন আঙ্গিকে চিহিৃত হয়ে থাকবে। কারণ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে আমি সব কিছু করব। এই উন্নয়ন যদি না হয় তার জন্য বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের কোন্দলই দায়ি হিসাবে চিহিৃত হয়ে থাকবে বলে নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেন।