শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যত গড়তে হলে শিখতে হবে। আর শিখতে হলে জানার প্রয়োজন। তাই তাদের শিক্ষার্থীদের পুথিগত বিদ্যার বাইরেও দুনিয়া ঘুরে দেখতে ও অতীত সম্পর্কে জানার পরামর্শ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। মঙ্গলবার ১৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ঐতিহ্যবাহী বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের নবীন বরন ও নব নির্মিত আইসিটি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্কুলটি পরিচালনায় বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি এহসান উদ্দিন সহ সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞানপ করে তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বর্তমান এডহক কমিটির কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের স্কুলে, ক্যান্টিন, একটি শহীদ মিনার ও বাগানের দাবী পূরণ করেছেন। সেই সাথে তারা স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। এজন্য আমি তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পূর্বের কমিটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আগের যে কমিটি ছিল তারা অনেক অপকর্ম করেছে। তারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়ে ছিলেন। এমন আগের সভাপতি নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মামলা পর্যন্ত করেছেন। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নষ্ট করার পায়তারা করা হয়েছে। ওই সভাপতি আবার এবারের নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। উনার বুঝা উচিত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন দেশের ভবিষ্যত। আর ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মন উদার করে কাজ করতে হয়। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনীত করার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ আমার কাছে সভাপতি হওয়ার জন্য সুপারিশ নিয়ে যাবেন না। বন্দরে বিএম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ এবং বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ দুটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিএম স্কুলের জন্য একজন যোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেছি যিনি এই বন্দরেরই সন্তান। তেমনি বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের জন্য যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনীত করবো যিনি কিনা দেশের জন্য অবদান রাখছেন এবং তিনি অবশ্যই বন্দরের সন্তানই হবেন।
সাধারণত এমপি সেলিম ওসমান কোন স্কুলের অনুষ্ঠানে গেলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মঞ্চে ডেকে তাদের সমস্যা এবং চাহিদার কথা জানতে চান। তেমনি এই অনুষ্ঠানেও তিনি শিক্ষার্থীদের মঞ্চে ডেকে সমস্যা ও চাহিদার কথা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে একটি সাইন্সল্যাব ও একটি গ্রন্থাগার এবং স্কুলের ভেতরে বৃক্ষরোপন করার জানান।
পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, সরকার থেকে বন্দরের ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব নির্মাণের চিঠি পেয়েছি। আমি বর্তমান কমিটির কাছে অনুরোধ করবো আমার কাছে যেন ল্যাবের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়, এ প্রকল্পের প্রথম স্কুলটির নামই হবে বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ। গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য আমি পরিচালনা কমিটিকে প্রয়োজনী উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করছি। সেই সাথে যেহেতু এটি একটি গালর্স স্কুল তাই এখানে একটি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপনের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করছি। সেই সাথে বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদকালে মধ্যে স্কুলে পর্যাপ্ত টয়লেট স্থাপন এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলেন। জরুরি ভিত্তিতে স্কুলে ফিল্টার পানির ব্যবস্থা করতে বলেন, প্রয়োজনে তিনি নিজে ফিল্টার পানির খরচ বহন করবেন বলেও জানান।
শিক্ষার্থীদের ছাদ কৃষিতে উদ্ভুদ্ধ হওয়ার আহবান রেখে তিনি বলেন, যেহেতু স্কুলের অভ্যন্তরে নতুন করে কয়েকটি ভবন নির্মাণ হয়েছে। সেহেতু গাছ এবং জায়গা দুইটাই কমে গেছে। তাই তোমাদেরকে ছাদ কৃষির ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে উপজেলা থেকে কৃষি কর্মকর্তার সহযোগীতা নিয়ে তোমাদেরকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, তোমরা আমাকে এম পি সাহেব বলবেনা “আমাকে দাদু বলবে দাদু বললেই আমি খুশি হবো।কারন আমার তো ছেলে নাই তাই আমি দাদু ডাক সুনতে পাই না। তবে মেয়ের ঘরে নাতীন আছে তাই নাতীনের নানা ডাক সুনতে পাই।
আমি নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরের শিক্ষার্থীদের জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির কাছে দুটি বাস দিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করলেই সেই বাস পাওয়া যায়। তোমরা তোমাদের স্কুল থেকে আবেদন করে সেই বাস নিয়ে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর সহ বিভিন্ন শিক্ষনীয় স্থানে শিক্ষা সফরে যেতে পারো। যেখান থেকে তোমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারবে, দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে। কিভাবে আমরা একটি দেশ একটি মানচিত পেলাম জানতে পারবে। সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে।
স্কুল পরিচালনা এডহক কমিটির সভাপতি ও বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, নির্বার্হী কর্মকর্তা কুদরত-এ- খোদা, বিকেএমইএ কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা, বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোদাসেরুল হক দুলাল, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, জেলা যুবসংহতির আহবায়ক রিপন ভাওয়াল, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সামসুল ইসলাম পরশ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।