মুসলমানদের জন্য শুক্রবার মানে জুমার দিনটি অত্যন্ত মূল্যবান ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দিনটি মহান আল্লাহ্ তাআলার কাছে অত্যন্ত মর্যাদার তাই তিনি এ দিনে বান্ধার জন্য বহু ফজিলত দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়ার শুরু থেকেই বেশিরভাগ কল্যাণমূলক কাজ ও ঘটনা এদিনে সম্পন্ন করেছেন। সর্বোপরি এ দিনেই কিয়ামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর এ দিনেই রয়েছে কল্যাণ ও উত্তম জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ার নির্দেশ।
জুমার এ দিনটি আল্লাহ্ তাআলার কাছে অত্যান্ত পছন্দনীয় ও মর্যাদাবান হওয়ায় তিনি এ দিনকে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মাতের জন্য বিশেষ নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ আদায়ের পরে জমিনে রিজিকের সন্ধানে বিচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সুরা জুমা : আয়াত ৯)
কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর মুসলিম উম্মাহর একমাত্র কাজ হলো, জুমার নামাজ আদায়ের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদের দিকে দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া। নামাজের সময় সব ধরনের খেল-তামাশা, কাজ-কারবার বন্ধ রাখা এবং নামাজ শেষ হওয়ার পর জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়া।
পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম রেখে আল্লাহর হুকুম পালনে কেউ যদি এগিয়ে আসে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির জন্য উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। কেননা আল্লাহ তাআলাই বান্দার সর্বোত্তম রিজিকদাতা। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘এরপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা : আয়াত ১০)
এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাকে অভয় দিয়ে বলেছেন, নামাজ আদায় করে, উনার জিকিরের সঙ্গে জীবিকার সন্ধান করলে তিনিই বান্দাকে উত্তম রিজিক দান করবেন। তিনিই বান্দাকে দুনিয়ার উত্তম জীবিকাসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজে সফলতা দান করবেন।
আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম রিজিকদাতা তাই তিনি অন্য আয়াতে বলেন-
وَ اِذَا رَاَوۡا تِجَارَۃً اَوۡ لَهۡوَۨا انۡفَضُّوۡۤا اِلَیۡهَا وَ تَرَکُوۡکَ قَائِمًا قُلۡ مَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَیۡرٌ مِّنَ اللَّهۡوِ وَ مِنَ التِّجَارَۃِ وَ اللّٰهُ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ
‘তারা যখন কোনো ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা জুমা : আয়াত ১১)
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অভয় দিয়ে বলেন, তোমরা নামাজ আদায় করে, উনার জিকিরের সঙ্গে জীবিকার সন্ধান করলে তিনিই বান্দাকে উত্তম রিজিকসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজে সফলতা দান করবেন।
তাই মুসলিম উম্মাহ উচিত হবে পূর্ণ উদ্যোমের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদের দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া । কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, বান্দার উত্তম রিজিক ও কল্যাণ লাভের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা জরুরী।
আবার নামাজ শেষে জীবিকার সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁকে ফজিলতপূর্ণ দিনে অধিক স্মরণ করতে বলেছেন। এ দিনে আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও চেষ্টার বিনিময়ের ফলেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে উত্তম রিজিক তথা জীবিকা দান করবেন।
মহান রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী জুমার নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। এ দিনে বেশি বেশি ইবাদাত-বন্দেগি করে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে উত্তম রিজিকসহ সকল অনুগ্রহ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।