নারায়ণগঞ্জে আরিফ হোসেন রিয়াদ (১৪) নামের এক কিশোর তিন মাস ধরে নিখোঁজ আছে। সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় বাবা-মা। তাদের অভিযোগ, প্রতিবেশী এক যুবকের প্ররোচনায় ফ্রি ফায়ার গেমসে আসক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছে সে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার খানপুর বউবাজার এলাকার ফুচকা বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন ও বিউটি বেগমের ছেলে রিয়াদ। তিন ছেলের মধ্যে সে মেজ। স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তাকে হারিয়ে বাবা-মা দুজনই নির্বাক হয়ে পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া সবই যেন ভুলে গেছেন তারা।
রিয়াদের বাবা আনোয়ার হেসেন বলেন, ‘প্রতিবেশী শরীফ গত দেড় বছর আগে থেকে আমার ছেলে আরিফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং আমার ছেলেকে মোবাইল ফোনে গেমসের নেশায় আসক্ত করে। শরীফ প্রায়ই ছেলেকে তার বসতঘরে নিয়ে গেমস খেলতো। তার নিজের বাসায় রেখে গেমস খেলার সুযোগ করে দিতো। আমার ছেলের দ্বারা সে লাভবান ছিল।’
আনোয়ার আরও বলেন, ‘১৮ জুলাই সকালে শরীফ আমার অবুঝ ছেলেকে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে ঘরে থাকা দুটি মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের রাউটার ও ৩ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যায়। এরপর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ আমার ছেলেকে খুঁজে বের করে দেয়। কিন্তু বাসায় আসার পর সে আবার অন্য কোথাও চলে যায়। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করলেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাইনি। আমি ছেলের সন্ধান চাই।’
বিউটি বেগম বলেন, ‘রিয়াদের বয়স কম হলেও শারীরিক গঠনে সে অন্যদের তুলনায় একটু বড় হয়ে গিয়েছিল। ফ্রি ফায়ার গেমস খেলতে খেলতে সে অনেক ভাষায় কথা বলতো। মেধাবী হওয়ায় গেমস খেলাতেও সে পারদর্শী হয়ে ওঠে। এ জন্যই অবুঝ ছেলেটিকে ভুল বুঝিয়ে প্রতিবেশী আরিফ দূরে নিয়ে গেছে। কারণ বাসায় থাকলে গেমস তাকে খেলতে দিতাম না। ভালোভাবে পড়ালেখার জন্য বলতাম।’
বিউটি বেগম আরও বলেন, ‘আমি তেমন পড়াশোনা করতে পারিনি। আমার স্বামীও কোনো জানেন না। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল। সেও বলতো মা আমি পাইলট হবো। আমিও তাকে বলতাম পাইলট হতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। আমার কথা শুনতো। তার হাতের লেখাও অনেক সুন্দর। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ালো গেমস। ছেলেকে গেমস থেকে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেও ছেলের সন্ধান পাচ্ছি না। বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলে। আমি বুঝি আমার ছেলে হারানোর কষ্ট। ছেলেটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমার চোখে ঘুম নেই। এই মনে হয় সে ফিরে এসেছে। তার কণ্ঠ আমার কানে ভেসে আসে। আমি আমার ছেলেকে বুকে টেনে নিতে চাই।’
বিউটি বলেন, ‘শরীফের অনেকগুলো নম্বর। একটিও খোলা নেই। তার বাবা মার কাছে গেলে তারা বলে শরিফের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নাই। আপনাদের যা মন চায় তাই করেন।’
শরীফের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা হানিফ বলেন, ‘শরিফের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমি গরিব মানুষ ভ্যান চালিয়ে খাই। শরিফের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইরে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নিখোঁজ ছেলেটিকে উদ্ধার করে অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর কী হয়েছে সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। অভিযোগ পেলে আবারও তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করবো।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আশা করি সন্ধান পেয়ে যাবো।