ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা নায়িকা পরীমণি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ২৬ দিন বন্দিজীবন কেটেছে জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। আলিশান ফ্ল্যাটে বিত্তবৈভব যার নিত্যসঙ্গী তার কিনা থাকতে হয়েছে লাল দেয়ালের ঘেরাটোপে। খেতে হয়েছে সাধারণ বন্দিদের খাবার। এই সময়টা ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির জীবনের বড় একটি বাঁক। জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে কারাগারের দিনগুলো।
কখন মুক্ত হবেন, মুক্ত হাওয়া নেবেন সেই অপেক্ষায় হাঁসফাঁস করছিলেন পরীমনি। অবশেষে প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২১ মিনিটে কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন পরীমনি। তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট, মাথায় সাদা ওড়না, চোখে কালো রোদচশমা।
কারাফটক থেকে যখন সাদা গাড়ি বের হলো, সানরুফ খুলে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনি ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যারা কারাফটকে অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তখন অনেকের চোখ আটকে গেল হাতের তালুতে মেহেদী দিয়ে লেখা — ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’। কাদের উদ্দেশ্য করে পরীমনির এই বার্তা সেই প্রশ্ন উঠেছে সবার মাঝে।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা শুরু হয়ে গেছে।
উপস্থাপক রুম্মান রশিদ খান লিখেছেন — ‘দুধের মাছি/সুসময়ের বন্ধু যারা; তাদের ভালোবাসার আর দরকার নেই পরীর।’
এমন বার্তার কারণ হিসেবে মডেল হৃদি উল্লেখ করেছেন, ‘যারা পরীমনির জন্মদিনে ফ্রিতে গিয়ে ফ্রি ফ্রি খেয়ে এসেছেন, আর সেলফি তুলে গেছেন; তাদের বোঝানো হয়েছে এটি।’
এদিকে মুক্তির পর পরীমনির অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অবশ্য আগেই পরীমনির আইনজীবী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এখন নায়িকা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না। একটু সময় নিয়ে রিফ্রেশ হয়ে কথা বলবেন। তাই জানা যায়নি, তার ওই বার্তাটি কাদের জন্য লেখা।
বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২১ মিনিটে আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীর কাছে তাকে হস্তান্তর করেছেন কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেল সুপার হালিমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরীমণিকে নিতে কারাফটকে সাদা গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তার খালু মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। পরে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে সাদা গাড়িতে পরীমণিকে নিয়ে কারাফটক ত্যাগ করেন তারা। এ সময় পরিমনি সাদা পোশাকে ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে পরীমনির জামিনের আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। তিন বিবেচনায় ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় তিনি পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মাদক মামলায় তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি।
৪ আগস্ট বিকালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন পরীমনি। এ সময় র্যাবের পক্ষ থেকে পরীমনিকে তার বাসায় অভিযানের কথা জানানো হয়। কিন্তু তিনি লাইভে এসে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার চালানো শুরু করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি ‘মিনিবার’ তৈরি করেন। বাসায় নিয়মিত ‘মদের পার্টি’ করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের সরবরাহ করতেন ও পার্টিতে অংশ নিতেন।
২০১৪ সালে সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করা পরীমনি এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও বেশ কয়েকটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। পিরোজপুরের মেয়ে পরীমনিকে চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে আসেন প্রযোজক রাজ।