সিদ্ধিরগঞ্জে এক মাদ্রাসায় বকেয়া বেতনের জন্য দুই শিশু শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৪ ঘন্টা তালাবদ্ধ করে মাদ্রাসা কক্ষে আটকে রাখার ঘটনার ২৪ ঘন্টায়ও থানায় মামলা হয়নি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঙ্গলবার (সন্ধ্যা ৭টা) ওই দুই শিশুর পিতা জামাল হোসেন জানান, থানায় অভিযোগ করতে চাইলেও পুলিশ নানাভাবে টালবাহনা করছে।
জানা গেছে, সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের আদমজী নতুন বাজার এলাকার দারুল আরকাম তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় বকেয়া বেতনের জন্য দুই শিশু শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৪ ঘন্টা তালাবদ্ধ করে মাদ্রাসা কক্ষে আটকে রাখেন ওই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। পরে স্বজন ও এলাকাবাসী খবর পেয়ে সন্ধ্যায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে। আটকে রাখা শিক্ষার্থীরা হলো, ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র মো. নাঈম (৭) ও একই শ্রেণির ছাত্রী তার ছোট বোন জেসমিন।
খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মির্জা মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের থানায় আসতে বলেন। পরে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানায় বসে মিমাংসার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ওই দুই শিশুর পিতা জামাল হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে আমার দুই সন্তানের ৬ মাসের বেতন বকেয়া পরে। বেশ কিছুদিন যাবৎ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল টাকার জন্য মোবাইল ফোনে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো।
পরবর্তীতে আমি মাদ্রাসায় গিয়ে প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে কিছু টাকা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা ঈদের আগে পরিশোধ করবো বলে আশ্বাস দেই। কিন্তু তাদের পাওনা টাকা না দেওয়ায় সোমবার দুপুর দেড়টায় আমার বড় মেয়ে আমার দুই ছেলে-মেয়েকে মাদ্রাসা থেকে আনতে গেলে প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান টাকা ছাড়া তাদেরকে যেতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এদিকে তাঁরা আমার দুই শিশু সন্তানকে মাদ্রার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে মাদ্রাসা থেকে চলে যায়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী আমাকে মোবাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে জানান টাকার জন্য মাদ্রাসায় আমার ছেলে-মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আমার সন্তানদের উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেই।
পরে থানা থেকে তাৎক্ষনিক সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মির্জা শহিদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌছে এসআই মির্জা শহিদুল ইসলাম অভিযুক্তদের থানায় আসতে বলেন। পরে থানায় আমাদের সাথে আলোচনা করেন এবং অনেক রাত হয়েছে বিধায় আমরা থানা থেকে বাসায় চলে আসি।
মঙ্গলবার দিনভর আমার অভিযোগ নিতে নানাভাবে টালবাহনা করছে পুলিশ। পরে রাতে অভিযোগ নিবে বলে জানান। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। যাতে আর কোন বাবা মা ও সন্তানদের এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়।
এদিকে এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মির্জা শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ভাই এ বিষয়টি গতকাল (সোমবার) থানায় দু’পক্ষকে নিয়ে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। ভূক্তভোগীর বাবা থানায় এসে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান। পরবর্তীতে থানায় বসে ওসি স্যারের নির্দেশে ভূক্তভোগীর বাবা ও অভিযুক্ত হুজুরদের ডেকে এনে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। যা হবার তা তো হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এমন ভুল হবে না বলে জানান অভিযুক্তরা। তবে এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য ওই প্রতিবেদককে বলেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক জানান, বিষয়টি আমি সকালে জানতে পারি। শুনেছি দু’পক্ষের মাঝে মিমাংসা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কেউ এখনো অভিযোগ দিতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিষয়টি জানতে একাধিকবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান পিপিএম কে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।