বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে দুই দফায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তার বাসভবনে হামলা চালায়।
পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ-আনসার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ সাত জন গুলিবিদ্ধ এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার রাত ১০টার পর নগরীর সিঅ্যান্ডবি সড়ক এলাকার সদর উপজেলা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষের পরই ইউএনওর বাসভবনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, প্যানেল মেয়রের ওপর হামলার খবর পেয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বাবুকে আটক করেছে পুলিশ।
গুলিবিদ্ধরা হলেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম, কনস্টেবল আবুল কালাম ও মো. শরীফুল এবং প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকনসহ সাত জন। তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার আম্মাম হোসেন বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে লাগানো পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করতে আসেন সিটি করপোরেশনের লোকজন। এতে বাধা দেন ইউএনও। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের লোকজন চলে যান। কিছুক্ষণ পর সিটি করপোরেশনের লোকজনকে নিয়ে পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়তে আসেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তখন ইউএনও রাতে পোস্টার-ব্যানার না ছিঁড়তে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওকে অবরুদ্ধ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গুলি চালানোর অনুমতি দেন ইউএনও। গুলি চালালোর সঙ্গে সঙ্গে তারা পাল্টা হামলা চালান। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষ লাগে। এতে ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আরও ২০-২৫ জন আহত হন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ও আশপাশে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছিল। রাতে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে নিয়ে ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে আসেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে এগুলো সরানোর অনুরোধ করলে গালিগালাজ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বাধা দিলে হামলা চালান। পরে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পুলিশ এসে একজনকে আটক এবং লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ হয়। পরে আবার জোট বেঁধে হামলা চালান। তখন গুলি চালানো ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক বলেন, ইউএনও জানিয়েছেন তার বাসভবন এলাকায় ব্যানার-পোস্টার খুলতে আসে কিছু লোকজন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এমনকি নিষেধ অমান্য করে ইউএনওর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার বাহিনী গুলি চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সে সময় ইউএনওর বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে একাধিক পুলিশ আহত হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর বাসার সামনে থেকে তাদের চলে যেতে বললে হামলা চালান। এ সময় সংঘর্ষে অনেকেই আহত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুকের সঙ্গে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ছয় কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চাল দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। পরে ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে আনা হয়।