আজ ২৭ এপ্রিল, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত সাত খুনের আট বছর। নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী তিন বছর যাবৎ সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির অপেক্ষায় আছে। নিম্ন ও উচ্চ আদালতের পর সাড়ে তিন বছর ধরে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে। সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী।
জানা যায়, আলোচিত এ মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব -১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। এরপর উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। উচ্চ আদালত থেকে সাত খুনের আসামিদের ফাঁসির দণ্ডাদেশসহ যে রায়টি হয়েছে সেই রায়টিই যেন সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকে।
সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে সাত খুনের মামলাটি সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারি শেষ হলে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে সাত খুনের মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ অপেক্ষায় আমরা এখন প্রহর গুনছি।
নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, সাত খুন মামলাটির রায় কার্যকরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রায়টি কার্যকর হবে কি না জানি না। কেন বিলম্ব হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না। আমি সন্তান হারিয়েছি। সন্তানের মরদেহের বোঝা বাবার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা। সরকার যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ রায়টি কার্যকর করেন। হাইকোর্টের রায়টি যেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কিছু দিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি সাত খুনের মামলার ফাঁসির আসামি জেলখানায় বসে ফোনে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এত সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছেন, আসলে তারা কি ফাঁসির আসামি না কি জামাই হিসেবে জেলখানায় আছেন প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি বলেন, তাজুলের মা সাত খুনের মামলার রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাবেন। আবুল খায়ের দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাত খুনে নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সলর মিজানুর রহমান রিপন বলেন, আশা করি উচ্চ আদালতের রায়টিই সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকবে এবং রায়টি দ্রুত কার্যকর করার দাবিও জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপিল বিভাগে মামলাটি সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে। আমরা আশঙ্কায় আছি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাত খুন মামলার রায়টি কার্যকর হবে কি না? আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হয়েও কেন এ মামলাটির রায় পেতে এতো দেরি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হেসেন খান বলেন, সাত খুনের মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আশা রাখি সরকার সাত খুনের মামলারটি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৬ জনের ফাঁসি ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়। আসামি পক্ষের আপিলের পর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতে যেখানে ২৬ জনের ফাঁসি আদেশ ছিল সেখানে ১৫ জনকে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। অন্যান্য আসামিদের সাজাও বহাল রেখেছেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজন অপহৃত হন।
অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।