আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, নজরদারি এবং অভিযানের পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না মাদক ব্যবসা।সিদ্ধিরগঞ্জকে দীর্ঘদিন ধরেই মাদকের গোল্ডেন ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক পাচারকারীরা।
ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থল শিমরাইল এলাকা হল এ মাদকের অন্যতম বর্ডার। ফলে এ অঞ্চলে মাদকের বিস্তার কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে মাদক পাচারকারীরা মাদক মজুদের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা গুলোকে।
থানা ও র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয় পাশে বলেই মাদক ব্যবসায়ীরা নিরাপদে এ অঞ্চলগুলোতে মাদক মজুদ ও ক্রয় বিক্রয় করে আসছে। বিশেষ করে নাসিক ৬নং ওয়ার্ড আদমজী নগর ও ৭নং ওয়ার্ড কদমতলী এলাকায় চলছে জমজমাট মাদক ব্যবসা। নির্বিকার রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত মহল্লায় অভিনব কৌশলে সেবনকারীদের কাছে মরন নেশা ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছে। একদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতা অন্যদিকে একাধিক কর্মকর্তার সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় মাদকের বড় বড় চালান এনে নিরাপদে সরবারহ হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের প্রায় ৬০০গজ দূরত্ব আদমজী ও বিহারী ক্যাম্প এলাকা। নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের পুরো এলাকায় রয়েছে ৮/১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশসহ ৬নং ওয়ার্ডের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে গাঁজা ও ইয়াবার কারবার না হচ্ছে।
এ এলাকার এলাকাবাসী সূত্রে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মান্নান প্রধান, মান্নান প্রধানের আপন বড় ভাই হান্নান প্রধান, আদমজী নতুন বাজার এলাকার নাহিদ, আদমজী বিহারী ক্যাম্পের ইবরার, মোশতাক, ফেকু, ছাত্তার, পাচুর স্ত্রী নাটকী, গুড্ডু মিয়া, নাদিম, হায়দার আলী ওরফে বুদ্দু মিয়া, হায়দার আলীর ছেলে হাসান, মেজর মিয়ার ছেলে বাবলা, হাসেমের ছেলে মিন্টু, বাদশাহ, স্বপন, কাল্লু, ইরফান এছাড়া কদমতলীর আবুল কালাম, সুমিলপাড়ার রুবেল, হান্নানের সহযোগী বাত্তি মিজান, নওশাদ, চরশিমুলপাড়া এলাকার বাবু ওরফে অফিস বাবু, কামাল, শাহীন, হাসান, সৌরভ, সোহেল, কামরুল, মিজান।
এদের মধ্যে স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময় মান্নান প্রধানের সহযোগী বাত্তি মিজান অবাধে মাদক বিক্রি করছে যা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা হাত বাড়ালেই পাচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা। ওই বাত্তি মিজান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুনলাইটের রাস্তার পাশ থেকে এসওরোড বটতলা রাস্তার পাশে বিক্রি করছে মাদক।
নাহিদ নতুন বাজার চার রাস্তার মোড় ও বিহারী ক্যাম্প, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তারকৃত অফিস বাবু বিহারি ক্যাম্প ও চরশিমুলপাড়া এলাকায় মাদকের নিয়ন্ত্রনসহ কেনাবেচা করছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে প্রতিপক্ষকে মাদক ও পেট্রোল বোমা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে র্যাব-৩ এর টিমের হাতে গ্রেফতার হয় পিচ্চি বাবু ও তার সহযোগী।
এদিকে ৬নং ওয়ার্ডের একাধিক মাদক মামলার আসামী মান্নান(৩০) কে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে জামিনে বেড়িয়ে এসে ফের মাদকব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরো সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সে মাদকব্যবসার ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মান্নানের আপন ভাই হান্নান প্রধান। হান্নান প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদক সহ মোট ১২ টির মতো মামলা রয়েছে। অপর দিকে তার ভাই মান্নানের নামে এলাকায় নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা, হত্যার চেষ্টা ও মাদক সহ মোট সাত থেকে আটটি মামলা রয়েছে। এছাড়া র্যাব-১১ এর একটি টিম সিদ্ধিরগঞ্জে আটি হাউজিং এলাকায় হান্নানের চোরাই তেল ব্যবসার আখড়ায় অভিযান পরিচালনা করে, সেখান থেকে ১০ হাজার লিটার চোরাই জ্বালানি তেলসহ একটি ট্যাংকলড়ি আটক করে র্যাব-১১।
এ সময় গ্রেফতার এড়াতে গাঁ ঢাকা দেয় হান্নান প্রধান। পরে র্যাব বাদী হয়ে হান্নানের বিরুদ্ধে মামলাও করে। এরআগেও একবার অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল ফেন্সি হান্নান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঢাকডোল বাজিয়ে ওপেন হাউজডে করে। সেখানে তারা বলে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করেছে তাই আমরাও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আসলে তাদের এ কথা গুলো কাগজে কলমে বাস্তবে তা নয়। মাঝে-মধ্যে কয়েকটি চালান র্যাবের হাতে ধরা পরলেও নির্বিকার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযান শিথিল থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। তবে এলাকাগুলোতে মাদক ব্যবসায়ের নেপথ্যের লোকেরা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়। মাদকের চালানগুলো গ্রহন করে ভাগবন্টন করে নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা রাত সাড়ে সাতটা থেকে ৯টার মধ্যে প্রতিটা মহল্লায় মাদক পৌঁছে দেয়। কারণ এ সময় পুলিশ ডিউটি পরিবর্তন করে। এসময় রাস্তায় পুলিশের কোনো গাড়ি থাকে না। তার কারণে নির্ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পৌঁছে দিতে কোনো বাধা অতিক্রম করে না বলে জানায় এলাকাবাসী।
এদিকে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে ব্যাপকভাবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক দেখানো অভিযানে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে পুরোদমে আবার শুরু হচ্ছে মাদক পাচার ও বিক্রি।ইদানীং ইয়াবা ব্যবসায় কিশোর বয়সের ছেলে ও নারীরা জড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ফলে সমাজে ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, যে কিশোর গ্যাংয়ের উদ্ভব হয়েছে প্রতিটি এলাকায়- তার নেপথ্যের প্রধান কারণই হল মাদকের সহজলভ্যতা। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক শেল্টারে কিশোরদের দিয়ে মাদক ব্যবসা করাচ্ছে বলেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিশোর গ্যাংয়ের লড়াই হচ্ছে, খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। এদিকে মাদক ও কিশোগ্যাং এর বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে নিয়মিত অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারনে অধরা থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তদন্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান মানিক জানান, মাদক ও কিশোরগ্যাং দমনে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবেনা।